ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুর রহিম কাসেমীকে মাদ্রাসা থেকে অ’ব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
পুরুষ সহকর্মীকে নারী সাজিয়ে ‘মুরব্বিদের ব্ল্যাকমেল’ করার চেষ্টার অভিযোগে গত ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার তাকে অ’ব্যাহতি দেয়া হয় বলে জানা গেছে শুক্রবার বিকেলে। কাসেমীর ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানানো হয়েছে মাদ্রাসাটির পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না হেফাজতে ইসলামের কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য কাসেমী; যিনি সংগঠনটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও।
শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ার মাদ্রাসা থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠানো মাদ্রাসার মোহতামিম (অধ্যক্ষ) মুফতি মাওলানা মুরাবকুল্লাহ স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে কাসেমীকে অ’ব্যাহতি দেয়ার কথা জানানো হয়।
কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, গত ১ ডিসেম্বর মাদ্রাসার সভায় ওই শিক্ষককে অ’ব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে কাসেমীর ওপর এক ব্যক্তিকে নারী সাজিয়ে মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ব্ল্যাকমেল করাসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিক্ষক যেন মাদ্রাসার নাম ব্যবহার করে কারও সঙ্গে প্র’তারণা বা কোনো সুবিধা নিতে না পারেন- সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মুরাবকুল্লাহ বলেন, এটি সম্পূর্ণ মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে জামিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে হেফাজতকে অবহিত করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে কয়েক দিন ধরেই আলোচনায় হেফাজত ইসলামের কয়েকজন নেতা। এর মধ্যেই এলো হেফাজত নেতা কাসেমীর এমন অপ’কর্মের খবর।
ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতা করে সম্প্রতি মাঠে নামে ইসলামী আন্দোলন। পরে একই সুর তুলে হেফাজতে ইসলাম। তারা হুম’কি দিয়েছে, ভাস্কর্য হলে টেনে-হিঁ’চড়ে ফেলে দেয়া হবে।
শুরুতে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ থাকলেও সম্প্রতি তারা মাঠে নেমেছে। ভাস্কর্য হলে আরেকটি শাপলা চত্বর তৈরির হুম’কি দেয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হক প্রতিরোধের মধ্যে পড়েছেন। আর এই পরিস্থিতিতে এখন ভাস্কর্যবিরোধী ধর্মভিত্তিক দলগুলো সুর নরম করেছে।
এরই মধ্যে শুক্রবার রাজধানীতে জুমার নামাজের পর ভাস্কর্যবিরোধী মিছিল করার চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। মিছিলকারীরা কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হলেও তারা কোনো দল বা সংগঠনের ব্যানার বহন করেননি। ইসলামী আন্দোলন বা হেফাজতে ইসলামের পরিচিত কোনো নেতাকেও দেখা যায়নি মিছিলে।
জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, মাওলানা কাসেমী গত ১২ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মাদ্রাসার ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে বিক্ষো’ভ করান। জামিয়ার সিনিয়রদেকে তিনি তোয়াক্কা করেন না। নিজের সহযোগী আব্দুল কুদ্দুসকে নারী সাজিয়ে মাদ্রাসার মুরুব্বিদের ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করেন। আব্দুল কুদ্দুস বর্তমানে জেলে রয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি এনামুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে তিনি শুনেছেন। মাদ্রাসার পক্ষ থেকে লিখিত জানানো হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শুক্রবার বিকেলে মাওলানা কাসেমীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অব্যাহতির কাগজ আমি এখনও পাননি। নথিপত্র না পেয়ে কোনো বক্তব্য দিব না।