সময় এখন ডেস্ক:
সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মারা গেছেন কিংবদন্তি নির্মাতা আমজাদ হোসেন। আজ শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মারা যান তিনি। খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তার বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুলের স্ত্রী ও নাট্য নির্মাতা রাশেদা আক্তার লাজুক।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘ভাত দে’ খ্যাত নির্মাতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র। ডিরেক্টর গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ও নির্মাতা এস এ হক অলিক ও বাচসাস-এর সভাপতি আব্দুর রহমান জানান, আমজাদ ভাইয়ের ছেলে সাজ্জাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, বাংলাদেশ সময় আজ দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বলে জানান।
আমজাদ হোসেনের মৃতদেহ বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়টি ভাবছে কিনা জানতে চাইলে আমজাদ হোসেনের পুত্রবধূ লাজুক বলেন, এখনো কিছু সিদ্ধান্ত হয়নি। কবে, কখন, কীভাবে নিয়ে আসা হবে তা সিদ্ধান্ত নেয়া হলে জানিয়ে দেয়া হবে।
ব্রেন স্ট্রোক করে গত ১৮ নভেম্বর সকালে তেজগাঁয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলা চলচিত্রের মাইলস্টোন ছবি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র নির্মাতা আমজাদ হোসেন। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই ছিলেন টানা লাইফ সাপোর্টে। তার অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, কোনো মিরাকল না ঘটলে বাঁচানো যাবে না আমজাদ হোসেনকে।
না, কোনো মিরাকল ঘটেনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাতে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে। সেখানে প্রায় ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছেন এই কিংবদন্তি নির্মাতা।
আমজাদ হোসেনের চিকিৎসার জন্য মোট ৪২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। এরমধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংককে নিয়ে যাবার জন্য ২২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য ২০ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) এর একজন প্রভাবশালী নেতা আমজাদ হোসেন ব্যক্তিগত জীবনে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত শুরু থেকেই। বিএনপির বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। কিন্তু তার রাজনৈতিক পক্ষ বিবেচনা পায়নি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। শেখ হাসিনাকে যারা কাছ থেকে চেনেন, তাঁর এই মানবিক দিকটি তাদের অজানা নয়। তিনি কারো রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রাধান্য দেন না সহযোগিতার ক্ষেত্রে।
আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় জনপ্রিয়তা পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।
১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া নানামাত্রিক কাজের জন্য ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। একইসাথে বাংলা একাডেমী পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
1