ভোলা সংবাদদাতা:
দীর্ঘ ৬ বছর পর ভোলা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি কুখ্যাত হাফিজ ইব্রাহিম রোববার ঢাকা থেকে ৪টি লঞ্চ ভর্তি করে সমর্থকের আড়ালে ভাড়াটে সন্ত্রাসীর বহর নিয়ে ভোলার বোনহানউদ্দিন নির্বাচনী এলাকায় ফিরতেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা।
দিনব্যাপী আতঙ্কে ছিলেন এলাকাবাসী। কার্ফ্যু জারি হয়েছে মতো বন্ধ হয়ে যায় সব দোকানপাট। হাফিজ ইব্রাহিম ভোরে দৌলতখান বোরহানউদ্দিন সীমানায় হাকিমউদ্দিন ঘাটে লঞ্চ থেকে নামার পর থেকে আওয়ামী লীগের ৬টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর হয়েছে। এছাড়াও ১৮টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ, ৫টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের গণসংযোগেও হামলা করা হয়েছে। কুপিয়ে জখম করা হয়েছে প্রায় ৯৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে। এসব ঘটনার জন্য হাফিজ ইব্রাহিমকে সরাসরি দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ।
বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার আলম জানান, এমভি তাসরিফ-১ ও এমভি তাসরিফ-৩ লঞ্চে আসা দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ঘাটে নামেন। ওইসব নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঝগড়া হয়েছে বলে শুনেছি। কুপিয়ে আহত হওয়ার কথা জানতে চাইলে সরোয়ার আলম এড়িয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, লঞ্চযোগ হাফিজ ইব্রাহিমের সঙ্গে আসা সহস্রাধিক ভাড়াটে সন্ত্রাসী ঘাটে নেমেই দেখতে পায় ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলামের সঙ্গে থাকা অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর একটি মিছিল। নৌকা প্রতীক দেখে সেদিকেই তেড়ে যায় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা। এ সময় হাফিজের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা চড়াও হন কামরুলের মিছিলটির ওপর। মুহুর্তেই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অস্ত্র সজ্জিত সন্ত্রাসীদের দেখে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
ওই সময় কামরুল গ্রুপের ১৮টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযেগ করে হাফিজের সন্ত্রাসীরা। এরপরেই তারা সেখান থেকে উদয়পুর রাস্তার মাথায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসের দিকে ধাওয়া দেয় এবং ভাঙচুর করে। এমন খবরে বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগ কর্মী বাহিনী অবস্থান নেয়।
এনটিভির সাংবাদিক আফজাল হোসেন এর দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, পেশাগত দায়িত্ব পালন করা ২ জন স্থানীয় সংবাদকর্মী এ সময় বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন।
দুপুরে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আজম মুকুল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কুখ্যাত হাফিজ ইব্রাহিম বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিবরণ দিয়ে জানান, ২০০১ সালের মতো তাণ্ডব চালিয়েছে রোববারও। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রায় ১শ জন নেতাকর্মীকে গণসংযোগের সময় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। ২০টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ ও ৫টি মাইক্রোবাসে ভাঙচুর ও ৬টি নির্বাচনীয় অফিস ভাঙচুর করে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
২০০১ সালে নির্বাচনের দিন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং নির্যাতনকারী হাফিজ ইব্রাহিম দীর্ঘ ৬ বছর পর এলাকায় ঢুকেছেন। স্থানীয়দের রোষের কারনে এতদিন এলাকায় ফিরতে পারেননি তিনি। নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি ঢাকা থেকে ৪টি লঞ্চযোগে প্রায় ২ হাজার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে প্রথমে দৌলতখান লঞ্চঘাটে এসে নামেন। তারপর ঘাটে অপেক্ষমাণ স্থানীয়রা তাদের দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তারা যাত্রীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
পরে বোরহানউদ্দিন হাকিমুদ্দিন লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছলে সেখানে টবগী ইউনিয়নের চেয়্যারম্যন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্নসম্পাদক কামরুল আহসান চৌধুরী তার লোকজন নিয়ে নির্বাচনী প্রাচারণায় নামলে হাফিজ ইব্রাহিমের ক্যাডাররা পক্ষিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়্যারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্নসম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নেত্বত্বে ৪/৫শত সন্ত্রাসী দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুল আহসান চৌধুরী, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জোহেব হাসান, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, টবগী ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনসহ প্রায় ১শ জন নেতাকর্মী গুরুত্বর আহত হন।
বোরাহনউদ্দিন থানা ওসি অসীম কুমার সিকদার জানান, ১৮টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ ও ৫টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।