বিশেষ সংবাদদাতা:
দূর্দান্ত নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য শেখ হাসিনার হাতে চমকের পর চমক দেখিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে দেখালো এক বড় চমক। তারচেয়েও বড় চমক হলো নতুন মন্ত্রিসভা। নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী যেমন সৎ এবং নিষ্ঠাবানদের নিয়েছেন, তেমনি পুরনো দলের হেভিওয়েটদের বাদ দিয়েছেন। তরুণদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মন্ত্রিসভা গঠন করে শেখ হাসিনা আরেকটি ঝুঁকিকে আলিঙ্গন করলেন। এই মন্ত্রিসভা শেখ হাসিনার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। ২০০৮ সালের চেয়েও এটি আনকোরা মন্ত্রিসভা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ এবং সরকারের নতুন যাত্রাপথ উদ্বোধন করলেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই মন্ত্রিসভা গঠন করে শেখ হাসিনা প্রমান করলেন তিনি অত্যন্ত সাহসী। এই মন্ত্রিসভা গঠন করে শেখ হাসিনা চমক নয়, বরং সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। আর কতটা সাহসী এই সিদ্ধান্ত, তা একটু পর্যালোচনা করে দেখা যাক-
১. হেভিওয়েট কেউ নেই: সদ্য ঘোষিত মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের কোন হেভিওয়েট নেতাকে নেয়া হয়নি। এমনকি সৎ এবং নিষ্ঠাবান হিসেবে পরিচিত, শেখ হাসিনার দুঃসময়ের পরীক্ষিত বেগম মতিয়া চৌধুরীকেও মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এটা ছিলো নতুন মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় চমক। সম্ভবত দলের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমুর মতো হেভিওয়েটদের বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতেই মতিয়া চৌধুরীকে বাদ দেয়া হয়েছে।
২. কোন আত্মীয় নেই: এই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী তার কোন কূলের কোন আত্মীয় স্বজনকে স্থান দেয়নি। বিগত মন্ত্রিসভাতেও প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রিসভায় ছিলেন। প্রথম দফায় তিনি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরিয়ে তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। এবার মন্ত্রিসভায় তাকে বাদ দেয়াটাকে অনেকে বলছেন অবিশ্বাস্য। একই সঙ্গে শেখ ফজলুল করিম সেলিম ৩য় বারের মতো মন্ত্রিত্ব বঞ্চিত হলেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে শেখ সেলিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৩. গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আনকোরা নতুন মুখ: অন্তত ৩টি গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ আনকোরা এবং নতুন মুখ নিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বিষ্ময়কর ছিল কুমিল্লা-৯ এর সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলামের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া। এই মন্ত্রণালয় সাধারণত দলের সাধারণ সম্পাদককে দেয়া হয়। কিন্তু সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরিয়ে ঐ পদে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে দিয়ে শেখ হাসিনাই প্রথাভঙ্গ করেছিলেন। কিন্তু এবার এই মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছে এমন একজনকে, রাজনীতিতে যার অভিজ্ঞতা খুবই কম।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন মুখ টিপু মুন্সীকে। টিপু মুন্সী নিজেই একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু এই মন্ত্রণালয়ের নানা মেরুকরণ তিনি কীভাবে সামলাবেন সেটা দেখার বিষয়।
প্রথমবার এমপি হয়ে প্রথমবারই মন্ত্রী হলেন শ ম রেজাউল করিম। তাকে দেওয়া হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তিনি এরকম একটি দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের চাপ কীভাবে সামলাবেন সেটাই দেখার বিষয়।
৪. বিতর্কিত কেউ নেই: নতুন মন্ত্রীসভায় বিতর্কিত কাউকেই রাখা হয়নি। বিগত মন্ত্রিসভায় যারা বিতর্কিত ছিল এমনকি দলে যারা বিতর্কিত তাদেরও মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর এই চমক সফল হবে কি না তা র্নিভর করবে নতুন মন্ত্রীদের কার্যক্রমের উপর।