সময় এখন ডেস্ক:
রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বিষয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিশিষ্টজন সম্পর্কে বিদেশে অবস্থানকারী কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ালে তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের ব্যবস্থা নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিতে কূটনৈতিক চ্যানেলে রাষ্ট্রদূতদের চিঠি দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ছাড়া ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে ইন্টারপোলকে জানিয়ে বিদেশ থেকে কয়েকজন গুজব রটনাকারীকে দেশে ফেরত আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। গুজব মোকাবেলায় জনসচেতনতার পাশাপাশি সাইবার প্যাট্রল জোরদার করেছে র্যাব ও পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার জগতে অপপ্রচার বন্ধ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক, টুইটার, জি-প্লাস, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে আসছে বেশ কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের সদস্যদের অধিকাংশই দেশের বাইরে অবস্থান করছে। ইতিমধ্যে এভাবে পরিচালিত ১৫টি ইউটিউব চ্যানেল ও ৩শর বেশি ফেসবুক আইডি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বন্ধ করেছে বিডি পলিটিকো, বাঁশের কেল্লাসহ ৪০টি নিউজ ডোমেইন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, এতদিন বিদেশে বসে গুজব রটনাকারীদের বিশ্বাস ছিল, তাদের কিছুই হবে না। এখন থেকে গুজব ছড়ালেই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হবে। পুলিশ সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই প্রথম বিদেশে অবস্থানকারী গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, র্যাবের সকল ব্যাটালিয়নে সাইবার মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। র্যাব সদর দপ্তরে এর কার্যক্রম রয়েছে। গুজব ও উসকানি বন্ধে এই বাহিনীর কারিগরি সক্ষমতা এবং দক্ষতাও রয়েছে। যাদের এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিআইডি বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ঠেকাতে এরই মধ্যে সিআইডি সাইবার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। এর জনবল কাঠামোয় রয়েছেন ৩৪২ জন। বর্তমানে সেখানে কাজ করছেন ৫২ জন। অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, ওমান, কাতার থেকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে এমন কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে সিআইডি। এ ছাড়াও দেশে বসে গুজব ছড়াচ্ছে এমন কয়েকজনকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে অপপ্রচার ছড়ানোর অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে মোট ১ হাজার ৬৭০টি।
এ ছাড়া সিটিটিসি মাসুদ রানা নামে একজনকে শনাক্ত করেছে, যে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনায় সে বাংলাদেশ সফররত জিম্বাবুয়ে দলকে হুমকি দিয়েছিল। ফেনীর মূল অধিবাসী মাসুদ ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। সিটিটিসি শনাক্ত করেছে যে, বিদেশ থেকে জাহিদ এফ সরদার নামের একটি আইডি থেকেও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এদিকে, এরই মধ্যে সিটিটিসি অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে কামরুজ্জামানকে (৬৩) গ্রেফতার করেছে। অনেক দিন ধরে সাভারে নিজের বাসায় থেকেই স্পর্শকাতর বিভিন্ন বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছিলেন তিনি। নামে-বেনামে তার ৫০টি আইডি রয়েছে। তার হেফাজত থেকে ৫টি মোবাইল সেট ও ৮টি সিমকার্ড পাওয়া যায়।
এ ছাড়াও সিটিটিসি জামায়াত-শিবিরের সদস্য রবিউল ও জাস্ট হাসানকে গ্রেফতার করেছে। হাসান বেশ কিছু পোর্টাল চালানোর পাশাপাশি অসত্য খবর পোস্ট করত। রবিউল জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকটি পেজের অ্যাডমিন ছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে আবদুর রহমান খোকা নামে আরেকজনকে খোঁজা হচ্ছে।
সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের ডিসি মো. আলিমুজ্জামান ৱবলেন, সাইবার ওয়ার্ল্ডে গুজব প্রতিরোধে দুই ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। একটি ‘সফট অ্যাপ্রোচ’, আরেকটি ‘হার্ড অ্যাপ্রোচ’। ‘সফট অ্যাপ্রোচ’ অনুযায়ী, গুজবের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সঠিক তথ্য সাইবার ওয়ার্ল্ডে তুলে ধরা হবে। অনেকেই আছেন, না বুঝেই গুজব ছড়িয়ে থাকেন। তাদের সঠিক তথ্য জানানো হয়। এসব পদ্ধতিতে কাজ না হলে ‘হার্ড অ্যাপ্রোচ’ অনুযায়ী মামলা ও গ্রেফতারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সমকাল
1