সময় এখন ডেস্ক:
দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে এই কার্যক্রম শুরু হবে। কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের চাপে নয় বরং সম্পূর্ণ নিজের আগ্রহেই এ টিকা নিচ্ছেন তিনি, এমনটাই জানালেন রুনু।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম টিকা নেবার অনুভূতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুনু ভেরোনিকা কস্তা বলেন, আমি স্বেচ্ছায় টিকা নিতে রাজি হয়েছি। টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের নে’তিবাচক ধারণা দূর করে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করাই আমার লক্ষ্য।
রুনু ভেরোনিকা কস্তা ২০১৩ সাল থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এর আগে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে কাজ করেন। মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নার্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। তিনি ২ সন্তানের জননী এবং তার স্বামী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী।
সময়এখন-কে রুনু বলেন, করোনার মধ্যে অনেক দেশ টিকা না পেলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য করোনার টিকার ব্যবস্থা করেছেন। উনি দেশে টিকা আনতে পেরেছেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের। প্রথম টিকা নেব— এটিও আমাকে আপ্লুত করছে।
সাইড ইফেক্ট নিয়ে কোনো ভ’য় পাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ওষুধেই সাইড ইফেক্ট রয়েছে। করোনার টিকা তৈরি করা হয়েছে একটা ভালো উদ্দেশ্যে। এখন কার বডিতে সাইড ইফেক্ট হবে, সেটা তো আর কেউ আগে থেকে বলতে পারবে না। সাইড ইফেক্ট নিয়ে ভ’য় পেলে কেউই এ টিকা নেবে না।
তবে, কার বডিতে এটা কাজ করবে এবং কার বডিতে সাইড ইফেক্ট দেখা দেবে, সেটা অন্য হিসাব— যোগ করেন তিনি।
রুনুর পর আরও ২ নার্সকে টিকা দেয়া হবে। একই সঙ্গে এদিন টিকা নেবেন ৩ চিকিৎসক। টিকাদানের সব প্রস্তুতি এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার বেলা ৩টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরপরই এর টিকা পাবেন রুনু। আর সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কুর্মিটোলা হাসপাতালের একজন নার্স জানান, রুনুসহ হাসপাতালটির ৩ জন নার্স এবং ৩ জন চিকিৎসক বুধবার এই টিকা পাচ্ছেন।
টিকা প্রদানের জন্য যে তালিকা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রথমে টিকা নেবেন ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। এরপর ফিমেল মেডিসিন ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নি খাতুন এবং একই ইউনিটের নার্স রিনা সরকার।
হাসপাতালটির চিকিৎসকদের মধ্যে টিকা নেয়ার তালিকায় প্রথমে রয়েছেন কনসালট্যান্ট লুৎফর কবির মবিন ও শাহরিয়ার আলম। তবে আরেক চিকিৎসকের নাম এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা গেছে, টিকা পাবেন এমন তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের শেষ মুহূর্তের শারীরিক অবস্থা দেখেই তাদেরকে টিকা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে কারো শারীরিক সমস্যা থাকলে তালিকায় রদবদলও আসতে পারে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জামিল আহমেদ জানান, বুধবার টিকা প্রয়োগের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের প্রথম টিকা নিচ্ছেন ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী। তিনি টিকা পাচ্ছেন বৃহস্পতিবার।
ঢাকা মেডিক্যালের মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশন বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডা. ফরহাদ বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত টিকা নেয়ার তালিকায় আমিই প্রথমে আছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আমিই ঢামেকে সবার আগে টিকা নিচ্ছি।
চিকিৎসক বলেন, টিকা গ্রহণ নিয়ে জনমনে আত’ঙ্ক তৈরি হয়েছে। মূলত এটা দূর করার জন্য যারা চিকিৎসক-নার্সসহ ফ্রন্টলাইনার রয়েছেন, তারা প্রথম টিকা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এই উদ্যোগটা মূলত সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্যই। এটা সাক্সেসফুল হলে আশা করি সারা দেশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে এই টিকা গ্রহণ করবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা দেয়া শুরু হবে। প্রথমে চিকিংসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা পাবেন। হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের ধারাবাহিকভাবে টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার পরে ওই ব্যক্তিকে ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আন্ডারগ্রাউন্ডে টিকা দেয়ার স্থান নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
28