অদৃশ্য কলকাঠির ইঙ্গিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার শুনানিতে বেঞ্চের অপারগতা?

0

আইন আদালত ডেস্ক:

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কয়েকজন মন্ত্রী এবং তাদের অনুগত সরকারের স্পর্শকাতর কয়েকটি বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে দেশে আনা ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লাহ এবং ভবানী প্রসাদ সিংহের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অপারগতা প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘এর আগে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাটি বিচারিক আদালতে চলাকালে হাইকোর্টের বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ সেখানে বিচারক হিসেবে কয়েকদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর ফলে হাইকোর্টের বিচারপতি হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি তাকে এ মামলার শুনানির দায়িত্ব দিলে তিনি মামলাটি শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাইকোর্টের এক বিচারপতি আক্ষেপ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলছে এই মামলা। ইতিমধ্যে এই মামলার সাক্ষী এক পুলিশ কর্মকর্তার রহস্যময় মৃত্যুও ঘটেছে। বেঞ্চের অপারগতাও কোনো অদৃশ্য কলকাঠির ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে আমার সন্দেহ। দূর থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, নিয়ম অনুসারে মামলাটির নথি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে। এরপর প্রধান বিচারপতি এ মামলার শুনানির জন্য হাইকোর্টের নতুন বেঞ্চ গঠন করে দেবেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক করা হয়। এ নিয়ে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে কর্ণফুলী থানায় দুটি মামলা হয়।

সিআইডি পুলিশ দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে। এর বিচারও একসঙ্গে শুরু হয়। পরে ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। পরে একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় বিচারিক আদালতের ৫১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

দুটি মামলার একটিতে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

বাবর, নিজামী ও পরেশ বড়ুয়া ছাড়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিন, অস্ত্র বহনকারী ট্রলারের মালিক হাজি সোবহান, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান এবং অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ।

এদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিন পলাতক। এই মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্যতম আসামি মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়।

পরে এই মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। এরপর গত বছরের ২২ মার্চ ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!