বিশেষ সংবাদদাতা:
সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপির অধিকাংশ নেতাদের কোনো পাত্তা নাই! তাদের কোন দলীয় কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে না। কর্মীদের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনে বিপর্যয়ের হতাশা থেকেই তারা আপাতত নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। তবে দলের একটি সূত্র বলছে, মহাসচিবের সঙ্গে দূরত্বের কারণে এবং দলীয় কর্মসূচির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন অনেক শীর্ষ নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান দীর্ঘদিন দলীয় কর্মসূচীতে অনুপস্থিত। তিনি এবার নির্বাচনও করেননি। নানা বিষয়ে তার সঙ্গে দলের মত পার্থক্য সেই ওয়ান ইলেভেন থেকে। তবুও দলের মহাসচিব তার নিকটাত্মীয় হবার কারণে কিছুদিন সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সব কিছু থেকেই তিনি আড়ালে। মাহাবুবের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, অযৌক্তিক ও লক্ষ্যহীন আন্দোলন, লন্ডন থেকে তারেকের কলকাঠি নাড়া- এসব রাজনীতি তার পছন্দ নয় জন্যই তিনি এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন।
ক’দিন আগেও সরব ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে দলের অধিকাংশ কর্মসূচীতে তিনি অনুপস্থিত। মহাসচিবের সঙ্গে তার বিরোধ এখন প্রকাশ্য। যেটা ফোনালাপ ফাঁস হওয়াতে স্পষ্ট হয়েছিল। দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। ব্যারিস্টার মওদুদ শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করতে চাইলেও সায় দেননি ফখরুল। বিভিন্ন সময় মির্জা ফখরুলকে নিয়ে অশালীন ভাষায় গালাগালিও করেছেন। নির্বাচনের পর পরই তিনি ঘোষণা করেছেন, ফখরুল মহাসচিবের পদ ছাড়লেই তিনি সক্রিয় হবেন।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে সরব নন। এটা মুলতঃ অসুস্থতা জনিত কারণে। কিন্তু এবার তিনি এবং তার স্ত্রী কাউকেই মনোনয়ন না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। যার বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছিল ডিবিসি চ্যানেলে প্রার্থীতা ঘোষণার পর এক সাক্ষাৎকারে। অভিমানেই তিনি নিজেকে আড়াল করেছেন বলে ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার সবগুলোরই বিপক্ষে ছিলেন। ড. কামালদের সঙ্গে ঐক্যকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছিলেন ‘শয়তানের সঙ্গে ঐক্য’। নির্বাচনের ব্যাপারেও তার অবস্থান ছিল নেতিবাচক। তবুও নির্বাচনের মাঠে ছিলেন। দলীয় কোন্দলে সহিংসতায় আক্রান্ত হন। এখন তিনি নিখোঁজ। দলীয় কর্মকাণ্ডে নেই। ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ভুল সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষুব্ধ গয়েশ্বর নিজেকে দূরে রেখেছেন। তবে শিগগিরই তিনি সচল হবেন বলে তার রাজনৈতিক শিষ্যরা জানান।
দলীয় কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে না স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এবং ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনকেও। তবে দলের মহাসচিবের সঙ্গে বিরোধে নয়, সমস্যা শারীরিক বলে দাবি করছেন ঘনিষ্ঠরা। শুধু এসব প্রবীণ নেতারা নন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আমান উল্লাহ আমান, মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মতো নেতারাও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। এরা সবাই দলের মহাসচিবের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। দলে অবসরে যাওয়া নেতার সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।