মিয়ানমারের ভিত্তিহীন অভিযোগ: বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ

0

সময় এখন ডেস্ক:

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি এবং আরসার ৩টি ঘাঁটি রয়েছে বলে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার কূটনৈতিক চ্যানেলে মিয়ানমারকে এ প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়ে। আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ওই অভিযোগ পুরোপরি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের কোথাও বসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব নয়। কারণ প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য কাউকে সুযোগ দেয় না বর্তমান সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বার্তায় আরও বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারি একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে দুইটি আরাকান আর্মি ও তিনটি আরসার ঘাঁটি রয়েছে। দেশটির এমন মন্তব্যে বাংলাদেশ আহত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোসহ এমন মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কড়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মুখপাত্রের মন্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নেই। সন্ত্রাস বিষয়ে বাংলাদশ কোনো ছাড় দেয় না। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদেশি সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম চালানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

সন্ত্রাস ও চরমপন্থা নির্মূলে বাংলাদেশ বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশের ভেতরে বিদেশি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অস্তিত্ব থাকার প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশ বিদেশি কোনো সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকেও প্রশ্রয় দেয় না। বাংলাদেশের নিরাপত্তা প্রহরীরা সার্বক্ষণিকভাবে সীমান্তসহ সারাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)র আসল পরিচয় কী?


ছবি: আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনী আর তার দেহরক্ষীরা

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, আরসার পূর্ব নাম হচ্ছে ‘হারকাহ্ আল ইয়াকিন’ বা ‘ন্যায়ের যুদ্ধ’। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে রাখাইনের মংডুর শহরতলির ৩টি পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে আরসা প্রথম আবির্ভূত হয়। সে সময় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হন। মাত্র কয়েক ডজন লোক ছুরি আর লাঠি নিয়ে ক্যাম্পে অতর্কিতে হামলা চালায় এবং কর্মকর্তাদের হত্যার পর হালকা অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

ওই বছরের অক্টোবরের শেষে আরসার প্রধান নেতা আতাউল্লাহ আবু আমার জুনুনি ১৮ মিনিটের এক ভিডিও বার্তায় এই হামলাকে সমর্থন করে এজন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতায় উস্কানিকে দায়ী করে বলেন, ‘সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার চালিয়েছে। তাই আমরা তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছি। আমরা তাদের এই বার্তাই দিতে চেষ্টা করেছি যে, হামলা যদি বন্ধ না হয় তাহলে আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার অবশ্যই আছে।’

আরসা নেতা আতাউল্লাহ একজন রোহিঙ্গা। তার পরিবার রাখাইন থেকে বিতাড়িত হয়ে পাকিস্থানে আশ্রয় পায়। করাচিতে তার জন্ম। পরে তিনি সৌদি আরব চলে যান। আরসার এই নেতা নিজের সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানাতে চাননি।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, মূলত রোহিঙ্গা যুবক-তরুণদের দিয়েই গঠিত হয়েছে আরসা। তারা ‘আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের গেরিলা যুদ্ধের’ প্রশক্ষিণপ্রাপ্ত। ২০১২ সালের রাখাইনে নারকীয় হত্যাকাণ্ড শুরুর পর অনেক রোহিঙ্গা যুবক বাঁচার তাগিদে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অনেকেই তখন বিপদসঙ্কুল দীর্ঘ সমুদ্রপথ ছোট ছোট যানে করে পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ার উপকূলে পৌঁছে। এভাবে ৩ বছর চলার পর ২০১৫ সালের দিকে মালয়েশিয়ার কোস্টগার্ড সেই পথটি বন্ধ করে দেয়। নির্যাতিত যে অংশটি রাখাইন ছেড়ে কোথাও যেতে পারেনি তাদের একটি অংশই মূলত আরসার সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পৃক্ত হয়।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!