অর্থনীতি ডেস্ক:
বাংলাদেশের দক্ষিণে বিশাল সমুদ্র এলাকা ঘিরে স্বপ্ন জেগে উঠেছে নতুন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। বিশাল এ জলসীমাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। এতে পাল্টে যাবে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্র। এরই মধ্যে বিশাল এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বিজ্ঞানী আবু সায়েদ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘চীন ও জাপান ২০০ থেকে ৩০০ বছর আগে সমুদ্রনির্ভর কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। এখন অনেক দেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে সমুদ্রনির্ভর কর্মকাণ্ড থেকে। আমাদের বিশাল সমুদ্র এলাকাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে। বিশাল এ সমুদ্রকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে বিশাল সমুদ্র এলাকাকে কাজে লাগাতে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সমুদ্রে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এর ১ শতাংশও আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। মাছ থেকে কিছুটা আয় করলেও তা খুবই নগণ্য। অথচ আমরা যদি এ সমুদ্রকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র।’
জানা যায়, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আইনি ঝামেলা চুকিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বঙ্গোপসাগরের সীমানার পরিমাণ বেড়েছে অনেক। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলায় বিজয়ী বাংলাদেশের মালিকানায় রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। বিশাল এ জলসীমায় রয়েছে তেল, গ্যাসসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ, সোনার চেয়ে অধিক মূল্যবান বালি, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম। বিভিন্ন প্রজাতির সি-উইড এবং মূল্যবান মাছ। এর মধ্যে নগণ্য পরিমাণ মাছ আহরণ করতে পারলেও বাকি সামুদ্রিক সম্পদ আহরণই করতে পারছে না বাংলাদেশ।
উপকূল থেকে মাত্র ৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত মাছ ধরার সামর্থ্য রয়েছে বাংলাদেশের জেলেদের। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাবে এর চেয়ে গভীরে মাছ ধরতে পারেন না তারা। অথচ পৃথিবীর দামি মাছগুলো থাকেই গভীর সমুদ্রে। গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরার প্রযুক্তি থাকলে মৎস্য খাত থেকেই প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করা সম্ভব হতো।
চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু দেশ ২০০ থেকে ৩০০ বছর আগেই সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতির দিকে মনোনিবেশ করেছে, যার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগই হচ্ছে সমুদ্রনির্ভর। তারা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দুই দশকের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় বাজেটের কম করে হলেও ১০ গুণ বেশি আয় হবে এ খাত থেকে।
অস্ট্রেলিয়াও সমুদ্রসম্পদ থেকে আয় করছে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৫ সালে এ খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সে দেশের সরকার। এ ছাড়া বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড হচ্ছে সমুদ্র ঘিরে। বিশ্বের ৪৩০ কোটি মানুষের ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ ও উদ্ভিদ। ৩০ শতাংশ জ্বালানি তেল ও গ্যাস আসছে সাগর থেকেই।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার নিজেদের সমুদ্র এলাকা থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ শুরু করলেও বাংলাদেশ এখনো তাদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতা, প্রয়োজনীয় গবেষণা, সক্ষমতা তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ ও যন্ত্রপাতির অভাবে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম