চট্টগ্রাম ব্যুরো
‘আপনাদের মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে দেবেন না’- দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টিকারী হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর এমন বক্তব্য গতকাল ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়। এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানান, এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
আজ শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর চশমা হিলে পৈত্রিক বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসার ১১৮তম বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দি সম্মেলনে ওই মাদ্রাসার পরিচালক ও হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, ‘আপনাদের মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে দেবেন না। বেশি হলে ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। আর বেশি যদি পড়ান পত্রপত্রিকায় দেখতেছেন আপনারা। ওই মাইয়া (মেয়ে) ক্লাস এইট, নাইন, টেন, এমএ ও বিএ পর্যন্ত পড়ালে কিছুদিন পর আপনার মেয়ে থাকবে না। তাই আপনারা আমার সঙ্গে ওয়াদা করেন। বেশি পড়ালে আপনার মেয়েকে টানাটানি করে অন্য পুরুষ নিয়ে যাবে। আমার এ ওয়াজটা মনে রাখবেন।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, মেয়েদের শিক্ষার বিষয় নিয়ে যিনি এ মন্তব্যটা করেছেন তিনি তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষানীতি প্রণয়ন বা শিক্ষা ব্যবস্থাপনা পরিচালনা বা শিক্ষাখাতের কোনো নির্বাহী দায়িত্বে নেই। আর এটা আমাদের রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই বক্তব্যকে আমলে নেয়ারও কিছু নাই।
পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং বিভিন্ন লেখকের লেখা বাদ দেয়ার বিষয়ে নওফেল বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করে। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে আমাদের বাধ্য করেছে।
চট্টল বীর খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আরও বলেন, বর্তমান সরকার নারী শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এরই মধ্যে হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহজেই মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা নিতে পারছে। এই মান ধরে রাখতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
চট্টগ্রামে আরও কিছু নতুন সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নওফেল বলেন, এটা খুব ব্যয়সাপেক্ষ। তাছাড়া স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় জমি মেলানো কষ্টকর। এ অবস্থায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর অবকাঠামো সুবিধা, আসনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ আনুষাঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো আমাদের প্রথম লক্ষ্য।
এ সময় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম, স্বাচিপ নেতা ডা. শেখ শফিউল আজম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদারসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।