বিশেষ প্রতিবেদন:
২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট নির্বাচন করে এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের ওই জোট দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে নির্বাচিত হয়।
খালেদা জিয়ার সামনে ছিলো এক অবারিত সুযোগ, কারণ বিএনপি এককভাবেই দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়েছিলো। কিন্তু খালেদা দিয়া ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর যে মন্ত্রিসভা গঠন করেন, তা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আমাদের স্বাধীনতার জন্য এক চরম অবমাননার শামিল।
দুজন স্বীকৃত যু’দ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী করা হয়। তারা হলেন- মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। এরা দুজনই একাত্তরে -ণ হ’ত্যা, অগ্নিসংযোগ, লু’টপাট এবং ধ- এর সঙ্গে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত ছিলো।
এর আগে যাদেরকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী করা হয়েছিলো, তারই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে আরও ভ’য়ঙ্কর দুই ঘা’তক- যারা বাংলাদেশের -ণ হ’ত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলো, তাদেরকে মন্ত্রী করা হয়। মতিউর রহমান নিজামী প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে, পরে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়। আর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে দেয়া হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ এর ৯ মাস পাবনার সাঁথিয়া এলাকায় নির্বিচারে -ণ হ’ত্যা চালিয়েছে এবং একাধিক ধ- ও অগ্নিসংযোগে অভিযুক্ত। অন্যদিকে আলী আহসান মুজাহিদ ফরিদপুর এলাকায় শুধু ত্রা’সের রাজত্বই কায়েম করেনি, ঢাকার বুদ্ধিজীবী হ’ত্যায় তার সরাসরি অংশগ্রহণ ছিলো।
এই দুই যু’দ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী করার মধ্যে দিয়ে খালেদা জিয়া নিজেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
এর ফলে বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের ষোলোকলা পূর্ণ হয়। এই দুইজন মন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের নিত্য নতুন সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে এবং বাংলাদেশে জ’ঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন সময় সার উৎপাদনের জন্য বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ১১৮২ টন রক সালফার চট্টগ্রামে অবস্থিত সিইউএফএল থেকে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সরিয়ে নেয় মতিউর রহমান নিজামীর ভাগ্নে সালাফি। সেই রাসায়নিক চলে যায় জেএমবিসহ কয়েকটি জ’ঙ্গি সংগঠনের হাতে। যা দিয়ে তৈরীকৃত বো’মা ব্যবহৃত হয় দেশব্যাপী ৬৩টি জেলায় একযোগে সিরিজ হাম’লায়।
এর ফলে বাংলাদেশে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইয়ের মতো জ’ঙ্গিদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। পাশাপাশি সারাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। যার নেতৃত্বে এবং প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত ছিল জামায়াত শিবিরের নেতারা।
মূলত ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার গোষ্ঠির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যায়। আর এরপর যু’দ্ধাপরাধীদের বিচার এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের সাজা প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার ফিরিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া এখন চলমান।
কিন্তু রাজাকারদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকার কারণে সেই প্রক্রিয়া এখনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাইনসাইডার।