টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলে ‘বালু পড়া’ দেয়া অদ্ভুত এক নারীকে ঘিরে ব্যাপক রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ উপস্থিতি, বালুতে সুগন্ধি আর মধুর স্বাদ নিয়ে যেমন সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য, তেমনি উঠেছে ভ’য়ভীতি আর জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আদায়ের অভিযোগ।
গত শুক্রবার টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের হালদার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। রোববার সরেজমিনে ও ভিক্টিমদের দেয়া বক্তব্যে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে প্রতিবেদক।
হালদারপাড়ার ভিক্টিম দিনেশ হালদার (৮০) বলেন, ঢাকা থেকে আমার নাতনি বাড়িতে বেড়াতে আসে। শুক্রবার ওই নারীর হঠাৎ উপস্থিতি দেখে এবং বিশ্বাস করে তার গর্ভে আগত একের পর এক সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
এ কথা শুনে ওই নারী তাদের সন্তান আর নষ্ট হবে না বলে টাকা দাবি করেন। পরে বাধ্য হয়ে তারা ওই নারীকে ১ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে বিদায় দেন।
মিনতী হালদার (৫০) বলেন, গত শুক্রবার ছিল আমার ছেলের বিয়ে। সেদিনই দুপুরে ওই নারীর আগমন হয় আমাদের গ্রামে। বিয়ের ব্যস্ততার মাঝে ওই নারী আমাকে ডেকে পাঠান ও একটি খাসি কিনে দেয়ার দাবি জানান। তা না হলে আমাদের অ’মঙ্গল হবে বলে হুম’কি দেন। ভ’য়ে আমি ওই নারীকে ৫০০ টাকা দিয়েছি।
গোপাল চন্দ্র হালদার (৩২) বলেন, শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ ওই নারীর গ্রামে আসার খবর পেয়ে আমি যাই। গিয়ে শুনি সে বিভিন্ন মানুষরে হাতে বালু পড়া দিচ্ছে, সেই বালু থেকে সুগন্ধি ছড়ানোসহ খেতে মধুর মতো লাগছে।
শুনে আমিও সেই বালু খাই এবং কথার সত্যতা পাই। সে কোনো কথা না বলে আমার কাছে টাকা চেয়েছে। এ কারণে আমি তাকে দেড়শ টাকা দিয়েছি। টাকা নিয়েও ওই নারী আমার হাতে থাকা রুপার ব্রেসলেটটি চায়। প্রথমে না করলেও পরে আমি ব্রেসলেটটা তাকে দিয়ে দিই।
তিনি আরও বলেন, পাগ’লের মতো অদ্ভুত ওই নারীকে আমি এলাকায় আগে কখনো দেখিনি। তবে কেউ কেউ দেখেছে বলে শুনছি। ওই নারীর পরনে কালো জামা, মাথায় জটা, চুল ছেড়া কাপড় দিয়ে বাঁধা ও মুখে অদ্ভুত ধরনের মুখোশ পরা ছিল।
এলাকার সবাই যার যার রোগ আর সমস্যা সমাধানের জন্য তার কাছ থেকে বালু পড়া খেয়ে টাকা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড ও খানুরবাড়ি গ্রামের ইউপি সদস্য সোহরাব আলী বলেন, ওই দিন আমি গ্রামের বাইরে ছিলাম। তবে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি।
গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বাবলু বলেন, আমি জানতে পেরেছি অজানা এক নারী এসে আমাদের গ্রামের কিছু মানুষকে ‘বালু পড়া’ দিয়ে বেশকিছু টাকা নিয়েছে। এটি আসলে জালিয়াতি নাকি অন্য কিছু সে ব্যাপারে পুলিশকে অবগত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল ওয়াহাব বলেন, এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, ওই নারীকে এলাকায় আগে কখনও দেখননি তারা। কালো জামা পরা, মাথায় জটা, চুল ছেড়া কাপড় দিয়ে বাঁধা ও মুখে অদ্ভুত ধরনের মুখোশ পরা ছিল। এলাকায় অনেকে যার যার রোগ ও সমস্যার সমাধানের জন্য তার কাছ থেকে বালু পড়া খেয়ে টাকা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজিব পাল চৌধুরী বলেন, এর চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোনও ভিত্তি নেই। বালু বা রাস্তার মাটি খেলে পরবর্তিতে মানুষজন পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রা’ন্ত হতে পারে। এতে কিডনিরও সমস্যা হতে পারে।
বিশেষ রাসায়নিক ব্যবহার করে যে কোনও কিছুকেই মুখে দিলে তা মিষ্টি স্বাদের মনে হতে পারে। সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত বলেও জানান ওই চিকিৎসক।