বঙ্গবন্ধুর সব চিহ্ন মুছে দেয়ার নির্দেশ জিয়ার, যেভাবে রক্ষা করেন এক কর্মচারী

1

বিশেষ প্রতিবেদন:

৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর সব চিহ্ন মুছে ফেলার উদ্যোগ নেন জিয়া। তিনি কার্যতঃ ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পর দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। এ সময় জিয়া তথ্য মন্ত্রণালয়কে বঙ্গভবনে এক জরুরী বৈঠকে ডেকেছিলেন। ঐ বৈঠকে তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন।

ঐ নির্দেশনার মধ্যে ছিলো-

১. রেডিও ও টেলিভিশনে কোথাও বঙ্গবন্ধুর (জিয়া বলেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান) নাম উচ্চারণ করা যাবে না। ২. ৭ মার্চের ভাষণ তো নয়ই, বঙ্গবন্ধুর কোন ভাষণ প্রচার করা যাবে না। ৩. রেডিও টেলিভিশনে পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর নাম উচ্চারণ করা যাবে না।

উল্লেখ্য, ১০ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে জিয়া উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (ডি.সিএম.এল এ) হন। এ সময় ১০টি মন্ত্রণালয় ছিলো জিয়ার হাতে। এই মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ছিলো- অর্থ, স্বরাষ্ট্র, শিল্প, বাণিজ্য, পাট, তথ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, কারিগরি ও আণবিক গবেষণা।

৭৫’র এর ১০ নভেম্বর থেকে ৭৬ এর ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় জিয়া তার অধীনে রেখেছিলেন। ১৮ সেপ্টেম্বর আকবর কবিরকে তথ্য ও বেতার উপদেষ্টা করা হয়। কিন্তু ১০ মাস তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে জিয়া একটি কাজ করেন। তা হলো বঙ্গবন্ধুর সব ভাষণকে একত্রিত করেন। অতঃপর তা পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন।

সে সময় (৭২-৭৫) প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ভিডিও ধারণ করা হতো ফিল্ম ক্যামেরায়। এই ধারণকৃত ফিল্মগুলো দুটি স্থানে সংরক্ষিত হতো, একটি বিটিভি আর্কাইভে অন্যটি ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ম এ্যান্ড পাবলিকেশন্স (ডিএফপি-তে)। জিয়ার নির্দেশে সব ফিল্ম ডিএফপিতে নিয়ে আসা হয়। সেগুলোকে পোড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

কিন্তু সে সময় সালাউদ্দিন নামের এক তরুণ কর্মচারী নিজের জীবন বাজি রেখে একটি পরিত্য’ক্ত বাথরুমে এগুলো লুকিয়ে রাখেন। ধরা পড়লে পরিণতি হতে পারত গুরুতর। সে সময় ডিএফপি থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়, ‘শেখ মুজিবের সব ভাষণ ধ্বং’স করা হয়েছে।’

১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান বঙ্গবন্ধু গবেষক অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। তিনি বঙ্গবন্ধুর ভিডিও ফুটেজ উদ্ধারে নামেন।

এ সময় সালাউদ্দিন নামের ঐ কর্মচারী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে এই ফিল্মগুলোর সন্ধান দেন। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছরে এসব নষ্টপ্রায়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অধ্যাপক সাইয়িদ এই ফিল্মগুলো মুম্বাইতে পাঠান। সেখানকার ফিল্ম ডেভেলপিং ল্যাবে এই অমূল্য ইতিহাস নতুন জীবন পায়।

শেয়ার করুন !
  • 1.4K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

১ Comment

  1. জানিনা ঐ ছেলেটা আজ কোথায় তবে এর প্রতিফল ভোগ করছেন তৎকালীন সময়ের তৎথ্য প্রতি মন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইদ,এভাবেই ভালবমানুষগুলো ঠুনকো অজুহাতে আওয়ামীলীগ থেকে অসম্মান করে বের করে দেয়া হয়,একটা কুচক্রী মহল ভালো মানুষগুলোকে সহ্য করতে পারেনা এদের রোশানলে শেষমেশ বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিকেরা দলচ্যুত হতে হয়,জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু

Leave A Reply

error: Content is protected !!