বিশেষ প্রতিবেদন:
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে বাংলাদেশ। আর এই সময়ে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে কিছু মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে। বিএনপি যেমন দীর্ঘদিন পর এখন প্রথমবারের মত ৭ মার্চ পালন করছে তেমনি জামায়াতও সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের জন্য নানারকম উদ্যোগ এবং কৌশল গ্রহণ করছে।
কিন্ত এই উদ্যোগ এবং কৌশলে জামায়াতের সামনে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি এসেছে তা হলো, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা। একাত্তরে পাকিস্থানি হা’নাদার বাহিনীর দোসর ছিল জামায়াতে ইসলাম। জামায়াতে ইসলাম সেই সময় একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং একাত্তরের -ণহ’ত্যা, ধ- এবং লু’ণ্ঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
আর এ কারণেই স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামকে নিষি’দ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, জামায়াতের শীর্ষ নেতা যু’দ্ধাপরাধের শিরোমণি একাত্তরের অন্যতম ঘা’তক গোলাম আযমসহ বেশ কয়েকজনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনেন এবং জামায়াতকে আবার রাজনীতি করার সুযোগ দেন।
কিন্তু একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা ছিল ঘৃ’ণ্য এবং সংগঠনটি একাত্তরের দেশবিরোধীতার জন্য কখনই ক্ষমা চায়নি। বরং ৭৫ এর পরে তারা আস্তে আস্তে সংগঠিত হতে থাকে এবং বাংলাদেশকে আবার পাকিস্থান বানানোর রাজনৈতিক কৌশলই অবলম্বন করতে থাকে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে জামায়াত ছিল পাকিস্থানের জামায়াত ইসলামের একটি শাখা প্রতিষ্ঠান। বলা হতো জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ। যার অর্থ হলো, পাকিস্থানি রাজনৈতিক দলের বাংলাদেশ শাখা।
সেই সময় জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হতো জামায়াত একটি বৈশ্বিক সংগঠন। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে যু’দ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে জামায়াতের মধ্যে একটি ধারা সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং ছাত্রশিবিরের কিছু নেতার নেতৃত্বে জামায়াত থেকে ৭১ এর প্রশ্নে একটি দল বেরিয়ে গেছে। এবার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্তে সংগঠনে বিভক্তি দেখা গেছে। যদিও এসব নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার রাজনৈতিক কৌশল বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ছাত্রশিবির এবং জামায়াতের তরুণ প্রজন্মের যারা আছে তারা একাত্তরের জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, জামায়াত কখনই একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না যদি তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকার ব্যাপারের বিষয়টি স্পষ্ট না করে। জামায়াতের অপেক্ষাকৃত তরুণরা মনে করছে, যারা একাত্তরের যু’দ্ধাপরাধে সম্পৃক্ত ছিল তাদের দায়-দায়িত্ব বর্তমান জামায়াতের নেয়া উচিত নয়।
তাদের মতে, একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতের দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। তবে জামায়াতের মূল নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা এখনও যু’দ্ধাপরাধীদের সমর্থক এবং গোলাম আযম, নিজামী, মীর কাশেম, আলী আহসান মুজাহিদেরই উত্তরসূরি। তারা মনে করে, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা ছিল একটি রাজনৈতিক বিষয়। রাজনৈতিক কারণে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। ভারতের আগ্রাসনের কারণে তারা বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকা অবলম্বন করে, এটাই তাদের ব্যাখ্যা।
কিন্তু জামায়াতের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম জামায়াতের এই ব্যাখ্যা মানতে চায় না। তাদের মতে, জামায়াতের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষু’ণ্ণ হচ্ছে একাত্তরের ভূমিকার প্রশ্নে। একাধিক বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে বিত’র্ক হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে জামাতের মধ্যে ভাঙনের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
বিশেষ করে জামায়াতের মধ্যে যারা উদারপন্থী আছেন, যারা নতুন আঙ্গিকে রাজনীতি করতে চান, তাদের মতে, একাত্তরের ভূমিকার জন্য যদি জামায়াত ক্ষমা না চায় তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনোই জামায়াত পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। পাশাপাশি জামায়াতের নামও পরিবর্তন করার ব্যাপারে চাপ দিচ্ছেন।
তবে একাত্তরের পরাজিত অংশটি এখনো পুরনো জামায়াতকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তাদের মতে, নাম পরিবর্তন বা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করলে সংগঠনের অস্তিত্ব মুছে যাবে। আর এই দ্ব’ন্দ্বে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেই শেষ পর্যন্ত জামায়াত হয়তো আরেকটি ভাঙনের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াবে। তবে যে রূপেই আসুক, জামায়াত যে অতীতের মত বাংলাদেশবিরোধীতা করে যাবে, এতে নিশ্চিত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বাংলাইনসাইডার।