ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে কী করেননি জিয়াউর রহমান!

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

জিয়াউর রহমান। নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভ’য়ংকর এক মানুষের মুখাবয়ব। যিনি ক্ষমতা দখল, স্বৈ’রশাসন ও গণতন্ত্র হ’রণের জনক। শুধু তাই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে উল্টোপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই করেছিলেন তিনি।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়াউর রহমানের শাসনামল ছিল এক কালো অধ্যায়। সে সময়ে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল বাংলাদেশ। আর তার এই ক্ষমতায় আরোহণের নেপথ্যে ছিল এক কালো ইতিহাস। ষড়’যন্ত্র করে তিনি সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হ’ত্যার নীল নকশা বাস্তবায়ন করেন। দখল করেন ব’ন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা।

শুধু তাই নয়, সংবিধান ল’ঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমান একই সাথে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। সামরিক বিধি ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এরপর শুরু হয় তার নতুন খেলা। ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের মাধ্যমে তিনি জনগণের ভোটাধিকার হ’রণের মাধ্যমে যু’দ্ধাপরাধীদের করেন সানন্দে পুনর্বাসন। তার সময় এটা প্রতিষ্ঠিত ছিল- ‘২০ গুন্ডা, ১০ হুন্ডা, ভোট ঠান্ডা।’

আর্মি অ্যাক্ট ভায়োলেশন করে সেনানিবাসে তার কর্মকান্ডের প্রতিবাদকারীদের তথাকথিত ক্যু’র অভিযোগে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার নিরাপধরাধ সৈনিককে জিয়াউর রহমান হ’ত্যা করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া, আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নি’র্মূল করেছেন সামরিক বাহিনী থেকে। সবচেয়ে বেশি লোকক্ষয় হয়েছিল বিমান বাহিনীর। সামরিক কর্মকর্তা, সৈনিকদের ডেডবডি পাওয়া যেত ভাগাড়ে।

আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই বিচারের নামে প্রহসনে রাতের আঁধারে ফা’য়ারিং স্কোয়াড বা ফাঁ’সি দেয়া হতো তাদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, এক হাতে বাটার মাখানো টোস্ট হাতে নাশতার টেবিলে অপর হাতে মৃ’ত্যু পরোয়ানায় সই করেছেন জিয়া। বিদেশ সফরে যাত্রাকালে বিমানের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েও তাকে সই করতে দেখা গেছে।

এই ঘটনায় শুধু বাংলাদেশ নয়, কেঁপে উঠেছিল সমগ্র বিশ্ব। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে তিনি ৭৫’র ১৫ আগস্টের হ’ত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি খু’নিদের সুরক্ষা ও তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ৭৫ এর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলে হ’ত্যার ঘটনার বিচারেরও উদ্যোগ নেননি জিয়া। উপরন্তু নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য রোপণ করেছিলেন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবৃক্ষ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ মুহূর্তে পাকিস্থানি বাহিনী কর্তৃক অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সকল ব্যাংক নোট পুড়িয়ে দিয়ে সবগুলো ব্যাংক শুন্য করে দেয়া হয়। এমন এক মুহূর্তে সাধারণ মানুষ যেন দেশ গঠনে মনোনিবেশ করে, অর্থের অপচয় না করে, বঙ্গবন্ধু পানশালা, জুয়া ও প’তিতাবৃত্তি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন। জিয়া ক্ষমতায় এসে সেসবের লাইসেন্স দেয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি করেন সামাজিক বি’শৃঙ্খলা।

জনগণ যেন এসবে ডুবে থাকে, রাজনীতি সচেতনতার পরিবর্তে রঙিন জগতে মজে থাকে, সেটাই চেয়েছেন জিয়া। তাই এহেন কোন জ’ঘন্য পথ নেই, যা নিজের ক্ষমতা চিরাস্থায়ী করার জন্য বেছে নেননি বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা।

স্বৈ’রশাসক জিয়া দেশের তরুণদের দু’র্বৃত্তায়নের দিকে ধাবিত করেন বলে উল্লেখ করেছেন পাকিস্থানের সাংবাদিক ও লেখক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। তিনি তার ‘বাংলাদেশ: আ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইতে জিয়ার শাসনামলকে ‘অমানিশার সরকার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন, গ্রাম্য যুবকদের জিয়া হাট-বাজারের ইজারার অধিকার দিয়ে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের নষ্ট রাজনীতির পিচ্ছিল পথে টেনে আনেন।

একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতার নেপথ্য গল্প যদি এমন হয়, তবে ভেবে দেখা উচিৎ, সেই দলের মাধ্যমে জনকল্যাণ কীভাবে হবে? কেনই বা মানুষ তাদের বিশ্বাস করবে? জিয়ার অতীতের সব অপকর্মের কারণে বিএনপি আজও ফল ভোগ করছে। পরিণত হয়েছে জনবিচ্ছিন্ন ও সাংগঠনিক তৎপরতাহীন অসার এক রাজনৈতিক দলে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!