বঙ্গবন্ধুর অতি আপন হলেও তারা আজ কত দূরে!

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

এবার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতেই ৭ মার্চ পালন হলো। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সমস্ত রাজনৈতিক দল এমনকি বিএনপিও ৭ মার্চ পালন করলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটিই একটি স্বাধীন দেশের রীতি হওয়া উচিৎ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে কিন্তু মৌলিক প্রশ্নগুলোতে একমত থাকবে।

৭ মার্চ পালনের মধ্য দিয়ে বিএনপি রাজনীতির মূল ধারায় ফিরে আসলো, বিভেদের রাজনীতি থেকে সরে দলমত নির্বিশেষে সকলের ৭ মার্চ পালন একটি বড় ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তবে ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর থেকে বাংলাদেশের ৭ মার্চের ভাষণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধ ছিল নিষি’দ্ধ। এই সময়ে সেই ৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত ২১ বছরের অন্ধকার যুগে যারা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছিলেন, তাঁর জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, ৭ মার্চের ভাষণ সম্প্রচার করতে গিয়ে নির্যা’তন সয়েছিলেন, প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদেরকে এবার ৭ মার্চে স্মরণ করা হচ্ছে না।

এটিই যেন এক বড় ট্র্যাজেডি। গণমাধ্যমের রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাসিত যুগে ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করতে গিয়ে ১৩ হাজারের বেশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জেলে যান। এই ভাষণ বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতো, জেলে নিয়ে যেতো।

৭৫ থেকে ৭৯ পর্যন্ত এই ভাষণ প্রচার করতে গিয়ে ৩১ জনকে হ’ত্যা করা হয়। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি খন্দকার মোশতাক সরকারকে অ’স্বীকার করে রাস্তায় নামেন। এই প্রথম প্রতিবাদকারী কাদের সিদ্দিকী এখন আওয়ামী লীগে নেই। তবে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা এই রাজনীতিবিদ এখনও বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর প্রথম বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ৭৫ এর ১৬ ডিসেম্বর এই ভাষণ প্রচার করেন। তবে ভাষণটি পুরোপুরি প্রচার করা সম্ভব হয়নি। ভাষণের কয়েক মিনিট প্রচারের পরই পুলিশ এসে ধাওয়া দেয় এবং মাইক্রোফোনসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে যায়।

১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রথম এ নিয়ে তথ্য অনুসন্ধান এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। তিনিও এখন আওয়ামী লীগে নেই। তিনি গণফোরামের একাংশের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই বিমানে ফিরে এসেছিলেন পাকিস্থানে শ্বশুরবাড়িতে ৭১-এর পুরোটা সময় গা বাঁচানো ড. কামাল হোসেন। তিনিও এখন আওয়ামী লীগে নেই। বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন হলেও বেইমানি করেছিলেন জীবিত বঙ্গবন্ধুর সাথে এবং তাঁর মৃ’ত্যুর পরেও।

অন্ধকার যুগে যারা বঙ্গবন্ধুকে চেতনায় ধারণ করেছিলেন, তাঁকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন নির্বাসিত। নিজেদের কর্মফলেই তারা এখন বিস্মৃতপ্রায়। ৭ মার্চের অন্যতম শূন্যতার জায়গা এটি।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!