বিশেষ সংবাদদাতা:
সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভীষণ হতাশ। রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা চায় বিএনপি যেন গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। যে কারনে জনসম্পৃক্ততা কমে গেছে, সেই কারন- দুর্নীতিবাজ এবং অপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত দলের শীর্ষ নেতাদেরকে বাদ দিয়ে এক আদর্শবান বিএনপি গঠন হলে রাজনীতির মাঠে গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে তাদের ধারনা।
এদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের মামলাগুলো ছিল তা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে বলেছেন, ‘বিএনপিকে নির্মূলের ষড়যন্ত্র করছে সরকার। সরকারের সমস্ত পদক্ষেপ হচ্ছে বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য’।
সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, বিএনপিকে ধ্বংস করা সরকারের লক্ষ্য নয় বরং বিএনপি যেন একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচালিত হয়, সেটাই সরকারের মূল আকাঙ্খার জায়গা। অর্থাৎ সরকার নতুন বিএনপি চাইছে। যে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করবে। ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করবে এবং জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকার করবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করছে, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা ঐক্যমত থাকা দরকার। যেখানে কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন মীমাংসিত হওয়া উচিত।’
টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে এই ঐক্যমতের ধারাটা সূচনা করতে চায়। বাংলাদেশে যে রাজনীতি করুক না কেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করতে হবে, ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করবে এবং আমাদের যে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সে মুক্তিযুদ্ধের আলোকে দেশ পরিচালনা করবে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্বের বিএনপি এটা স্বীকার করে না। ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের অপশক্তির হাতে হাত মিলিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্টের জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের নৃশংস হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারীদের একজন। যিনি সবকিছু জেনেও এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য ইন্ধন দিয়েছিলেন। ১৫ আগষ্টের বর্বর সেই ঘটনার পর সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ার জিয়াউর রহমান। কারণ খন্দকার মোস্তাকের পর তিনি প্রথমে সেনাপ্রধান। তারপরে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্টের খুনীদের পূনর্বাসন এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসনসহ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। জিয়ার মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াও একই ধারা অনুসরন করেছেন। তিনি কর্ণেল ফারুক, রশীদসহ ‘৭৫ এর হত্যাকারীদের মদদ ও পৃষ্টপোষকতা করেছেন। তাদের কূটনৈতিক চাকরির পদোন্নতি দেওয়ার মত কাজ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াও ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেননি। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করেছেন। তাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়াও এই স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী এবং ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্ট এর অপশক্তির সঙ্গে হাতে হাত রেখেই রাজনীতি করেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা সম্বন্ধে কটুক্তি করেই তারেক জিয়াই বাংলাদেশে বিভক্তির রাজনীতি তৈরী করেছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেনে। সেজন্য আওয়ামী লীগ মনে করে যে, বিএনপির যে এখন দূরাবস্থা। এই দু:অবস্থা হয়েছে ভুল পথের রাজনীতির ফল। যেহেতু তারা ১৫ আগষ্টের অপশক্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করেছে। সেই রাজনীতির পরিমানামই হলো বিএনপির আজকের হাল।
বিএনপির এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ মনে করে, জিয়া পরিবার মুক্ত একটি বিএনপি তৈরী করতে হবে। যেই বিএনপি ১৫ আগষ্ট উল্লাস করবে না। জন্মদিনের কেক কাটার বীভৎস নাটক করবে না। যারা স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্ত করবে না। সেইরকম বিএনপি তৈরী করার ক্ষেত্রে এই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিয়েছে বলে অনেক নেতা মনে করেন।
আওয়ামী লীগের অনেকেই ধারণা করছেন যে, খালেদা জিয়া এখন রাজনীতিতে পরিত্যক্ত হয়েছেন। তারেক জিয়াকেও দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা হবে। এর মাধ্যমে একটি নতুন ধারার বিএনপি সূচিত হবে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এ ব্যাপারে আশাবাদী। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে। সে ঐক্যফ্রন্টে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা বলা হয়েছে। সেসব কথা বিএনপি নেতারা প্রতিবাদহীনভাবে শুনছেন।
কাজেই বিএনিপির সংশোধনের এখনো সুযোগ রয়েছে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে। বিভিন্ন মত, বিভিন্ন চিন্তা চেতনা থাকবে। বিভিন্ন আদর্শের কথা বলা হবে। কিন্তু মৌলিক যে জায়গা, সেখানে একমত থাকুক এমন একটা রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠিত হোক সেটা আওয়ামী লীগ চায়। সেজন্যই আওয়ামী লীগ চায় নতুন বিএনপি।
2