বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু, ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভূক্তির অপেক্ষা

0

সময় এখন ডেস্ক:

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় ১০০ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয় প্রায় ১ মাস আগে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির আদল বরাবর রোপণ করা হয় এই চারা। সেই চারা বড় হতে শুরু করায় এখন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মনোনীত দুই প্রতিনিধি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা জানান, এখানে গিনেস রেকর্ডের শর্তগুলো শতভাগ মেনেই বঙ্গবন্ধুর এই প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে।

গিনেস বুকে এ মুহূর্তে রেকর্ডটি চীনের দখলে। ২০১৯ সালে চীন যে শস্যচিত্র তৈরি করে সেটির আয়তন ছিল ৭৫ বিঘা।

ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার কর্তৃপক্ষের দাবি, বগুড়ায় যে ১০০ বিঘা জমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি।

মঙ্গলবার সকালে এই শস্যচিত্র পরিদর্শন করেন শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী। তারা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মনোনীত প্রতিনিধি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে।

শস্যচিত্র পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড প্রধান কার্যালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ওই অঞ্চল (বগুড়ার শেরপুরে) পরিদর্শন করে ক্রপ মোজাইকের ওপর কী পরিমাণ কাজ করা হয়েছে, কোন ধরনের শস্য ব্যবহার করা হয়েছে- এসব বিষয় দেখে সঠিক প্রতিবেদন তৈরি করে পাঠাতে।

সাইট ভিজিট করে দেখা গেছে, এই অঞ্চলে বৃহত্তর আঙ্গিকে সঠিকভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে। সার্ভে করে দেখা গেছে, এটার আয়তন ৪০০ বাই ৩০০ মিটার। এর বাহিরেও আরও জায়গা রয়েছে। গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের সবগুলো নির্দেশনা পরিপূর্ণভাবে মানা হয়েছে। বিশ্ব রেকর্ড করার মতো অবস্থা রয়েছে।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের শর্তে বলা হয়েছে, দুটি ভিন্ন রঙের শস্যের ব্যবহার থাকতে হবে। এখানে তার পূর্ণতা এসেছে। শস্যের ৪০ ভাগ হবে বেজ। আর ৬০ ভাগ হতে হবে মূল ইমেজ। এই শস্যচিত্রে সেই বিষয়টি সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন দুটি রঙের শস্য ব্যবহার করা হয়েছে।

শস্যের যে ঘনত্বের কথা উল্লেখ রয়েছে, তাও পরিপূর্ণভাবে মানা হয়েছে। শস্যচিত্রে কোনো কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা যাবে না, এখানে টোটালি প্রাকৃতিকভাবে শস্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বব্যাপী রেকর্ড ভঙ্গকারী একটি অনন্য ক্যানভাস তৈরি করতে যাচ্ছেন।

সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই প্রতিনিধিদলের প্রধানও। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শস্যচিত্রে যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে ফুটিয়ে তেলা হয়েছে, তার সাথে স্কেচের তৈরি বঙ্গবন্ধুর শতভাগ মিল রয়েছে। স্কেচের সাথে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর রঙের শতভাগ মিল রয়েছে। শস্যের ভ্যারাইটিও রয়েছে নির্দিষ্ট স্থানে সুনির্দিষ্টভাবে। ড্রোন থেকে তোলা ছবিও শতভাগ ঠিক আছে।

তিনি আরও বলেন, এটি একটি ক্রপ ফিল্ড মোজাইক। এখানে কোনো কৃত্রিমতা থাকবে না। কোনো কৃত্রিম রঙ সংযোজন করা যাবে না। এখানে প্রাকৃতিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর ছবি ফুটে উঠেছে। পরিমাপ ঠিক আছে কি না তার সঠিক তথ্য দেবেন সার্ভেয়ার। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সব ঠিক আছে। এই শস্যচিত্র দেখে আমি শতভাগ সন্তোষ প্রকাশ করছি। আজকের প্রতিবেদন আমরা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

শস্যচিত্রের এই প্রকল্প জরিপ করছে শেরপুর উপজেলা প্রশাসন। এই দলের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা সার্ভেয়ার হাবিবুল ইসলাম বাবলু। তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকায় ৬ জনের একটি দল পরিমাপ করছে। ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে জমি পরিমাপ করা হচ্ছে। সঠিক তথ্য পেতে আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে।

গত ২৯ জানুয়ারি এই প্রকল্পের চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।

মঙ্গলবার প্রকল্প এলাকা পরির্দশন করে নাছিম বলেন, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু– এটি ভিন্ন ধরনের ভিন্ন মাত্রার একটি কর্মসূচি। এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা হবে। সারা বিশ্বকে জানাতে চাই, বাংলাদেশ জাগ্রত হয়েছে। নান্দনিক ছবির মাধ্যমে জাতির জনকের প্রতিকৃতি তুলে ধরা হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিকৃতিটি তৈরি করা হয়।

জাতীয় পরিষদের সদস্যসচিব কৃষিবিদ কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু কর্মসূচির কাজ শুরু করা হয়। বেগুনি ও সবুজ রঙের ধানগাছে ফুটিয়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। চায়না থেকে বেগুনি রঙের ধানের জাত (এফ-১) আমদানি করা হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ কর্মসূচির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ১০০ বিএনসিসি ক্যাডেটকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ কাজের জন্য তৈরি করা হয়।

এই প্রকল্পে ৩ বিঘা জমি ইজারা দিয়েছেন একই গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিদিন অনেক মানুষ দেখতে আসছে। বাস নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন ঘুরতে এসে ব্যাপক খুশি। আগে বুঝতে পারিনি ধানের মধ্যে দিয়ে মানুষের ছবি দেখা যাবে। তাও আবার বঙ্গবন্ধুর ছবি।

আমি ব্যাপক খুশি জমিতে এমন চাষ দেখে। সাধারণভাবে এই ছবি দেখা যাচ্ছে না। পাখির মতো উপর থেকে দেখা যাচ্ছে ক্যামেরার মাধ্যমে।

গৃহবধূ মনিরা বেগম বলেন, ধান ক্ষেতে বঙ্গবন্ধুর ছবি তৈরী হবে, এটা শুনে প্রথমে আমরা কেউ বুঝিনাই বিষয়টা। দেখি অনেক মানুষ আসতেছে যাইতেছে গাড়ি নিয়া। অনেক ছেলেপেলে মাঠে মাপজোক করে ধান লাগাইছে। নিচ থেকে বুঝা যায় না, কিন্তু উপর থেকে তোলা ছবিতে বঙ্গবন্ধুর মুখ বুঝা যায় স্পষ্ট। কী যে ভালো লাগতেছে এইটা দেখে।

আয়োজকরা জানান, ১ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের সাথে প্রতিদিন যুক্ত ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষ শ্রমিক। তাদের সমন্বয়ে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

তারা আরও জানান, এর আগে ১৩ রেজিমেন্টের বিএনসিসির ১০০ সদস্য শুকনো জমিতে প্রতিকৃতি নির্মাণ করেন। আরেকটি দল কাদা জমিতে লে-আউট তৈরি করেন। তাদের মধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সদস্য ছাড়াও বগুড়ার আজিজুল হক সরকারি কলেজ ও সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

পরে নকশার দায়িত্ব পায় এক্সপ্রেশন লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। এই ১০০ বিঘা জমি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি ৯ হাজার টাকায় ৭ মাসের (নভেম্বর থেকে মে) জন্য ইজারা নেওয়া হয়।

প্রকল্পটির ব্যবস্থাপক এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু একটা ইউনিক প্রজেক্ট। জাতীয় কমিটির মাধ্যমে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মূল উদ্দেশ্য হলো শস্যচিত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা।

কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান বলেন, এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শস্যচিত্রটি পরিপূর্ণ হবে। তখন ড্রোন দিয়ে ছবি তুললে শস্যচিত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি পুরোপুরি দেখা যাবে। শস্যচিত্র পূর্ণ হলে তথ্য-উপাত্ত গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

এমন উদ্যোগে উৎফুল্ল স্থানীয়রা। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে এই এলাকার সুনাম, এটা তাদের মাঝে সৃষ্টি করেছে ব্যাপক চাঞ্চল্য।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!