বড় ধরণের কয়েকটি সংকটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

টানা ১২ বছর ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এক যুগ পর এসে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা কারণে অস্থিরতা, অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই এখন প্রকাশ্যে বলছেন। তাছাড়া দলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা-সংকট ক্রমশ প্রকাশ্য হচ্ছে।

শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ অনেকগুলো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। যা নিয়ে আওয়ামী লীগে অস্থিরতা, হতাশা এবং সংকট তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগে যে বিষয়গুলো নিয়ে সংকট তৈরী হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:

১. সিনিয়র নেতারা ভূমিকাহীন: আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র নেতাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে ভূমিকাহীন দেখা যাচ্ছে। এমনকি উপদেষ্টামণ্ডলীতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা রয়েছেন, যেমন- তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু। তাদেরকে বিশেষ দিবসে কার্যক্রম ছাড়া অন্য কোনও কর্মকাণ্ডে পাওয়া যাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের যেই প্রেসিডিয়াম সদস্য রয়েছে যেটিকে মনে করা হয় দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক প্রতিষ্ঠান। সেই প্রেসিডিয়াম সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশই একেবারেই ভূমিকাহীন অবস্থায়; তাদের কোনও রকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি দলের কোনও সংকটে বা রাজনৈতিক কর্মসূচীতেও তাদেরকে পাওয়া যাচ্ছে না। সিনিয়র নেতাদের এই উদাসীনতা দলের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া করছে।

২. জেলায় জেলায় গ্রুপিং, সহিং’সতা: প্রতিটি জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগে গ্রুপিং প্রকাশ্য রূপ ধারণ করছে। শুধুমাত্র নোয়াখালীর ঘটনা গণমাধ্যমে আসছে। যদিও প্রতিটি জেলায় নোয়াখালীর মতই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলেই আওয়ামী লীগের নেতারা রিপোর্ট দিচ্ছেন। কয়েকটি জেলায় গ্রুপিং, প্রার্থী, পাল্টা প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী ইত্যাদি পৌরসভা নির্বাচনের সময় প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে।

যারা দলের প্রতিপক্ষ হয়েও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিল তাদের বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কারও বিরু’দ্ধে কোনও রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে গ্রপিং কমার বদলে আরও বেড়ে গেছে।

৩. লাগামহীন কথাবার্তা: আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অস্থিরতার মধ্যে একটি হচ্ছে তৃনমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের লাগামহীন কথাবার্তা। তারা একে অন্যকে শুধু দোষারোপ করছেন না একে অন্যের বিরু’দ্ধে ক’টাক্ষমূলক মন্তব্য করছেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী।

৪. অনু-প্রবেশকারীদের দাপট: আওয়ামী লীগে অনু-প্রবেশকারীদের বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও তারাই এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জেলায় ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। এবারের স্থানীয় নির্বাচনের সময় অনু-প্রবেশকারীদের দাপট আরও প্রকাশ্য রূপ দেখা গেছে।

৫. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো: আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা রোগে ভুগছে। আওয়ামী লীগের প্রধান দুটি সক্রিয় সংগঠন ছিল ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ। এই দুটি সংগঠনকেই তেমন কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর তেমন কোনও দৃশ্যমান কর্মসূচির নেই।

অবশ্য আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি ও বিভিন্ন বাস্তবতায় অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সীমিত আকারে করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী বিএনপি এবং বাম রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের পরও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় দেখা যায়নি।

আর এই ধরনের সংকট কাটিয়ে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্য সংগঠিত হয়ে কীভাবে প্রস্তুতি নেবে সেটাই দেখার বিষয়। বাংলাইনসাইডার।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!