জিয়ার খেতাব বাতিল হলে একই অপরাধে তাহেরের কেন নয়?

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সুপারিশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, তদন্ত করা হচ্ছে এবং এই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে তার বীর উত্তম খেতাব বাতিল হবে কি না তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তারা এই খেতাব বাতিলের পেছনে সবচেয়ে বড় যুক্তি দেখাচ্ছেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ষড়’যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা এবং তিনি এই হ’ত্যাকান্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

৭৫ পরবর্তি সময়ে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হ’ত্যাকারীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এবং তাদের বিদেশে যাওয়া, কূটনীতিক চাকরি দিয়েছেন। আর এই যুক্তিতেই তার বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে, যদি জিয়াউর রহমানে বীর উত্তম খেতাব এই যুক্তিতে বাতিল করা হয় তাহলে আরেক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জাসদ নেতা কর্নেল তাহেরেরও একই কারণে বীর উত্তম খেতাব বাতিল হওয়া উচিত। কারণ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনায় কর্নেল তাহেরের ভূমিকাও কম নয়।

বঙ্গবন্ধু মা’রা যাওয়ার পর কর্নেল তাহের বঙ্গবন্ধুর ডেডবডি সাগরে ভাসিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘জাসদের উত্থান-পতন : অস্থির সময়ে রাজনীতি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘তাহের আক্ষেপ করে নঈমকে বললেন, ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল ডেডবডিটা বঙ্গপসাগরে ফেলে দেওয়া।’

১৫ আগস্টের পর গণবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। লিফলেটের শিরোনাম ছিল- খু’নি মুজিব খু’ন হয়েছে-অত্যা’চারীর পতন অনিবার্য।

সাম্প্রতিক সময়ে মহিউদ্দিন আহমদের লেখা ‘প্রতিনায়ক: সিরাজুল আলম খান: নিউক্লিয়াস, মুজিব বাহিনী, জাসদ’ গ্রন্থে তিনি বলেছেন, ‘১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে কর্নেল তাহেরের সব সময় যোগাযোগ ছিল। অভ্যুত্থানকারীরা ৩ নভেম্বর দেশ ত‌্যাগ করেন। ওই দিন তাহের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে দিনভর বঙ্গভবনে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সমঝোতা হয় যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে জিয়াউর রহমান আবার সেনাপ্রধান হবেন এবং আগস্ট অভ্যুত্থানের কুশীলবরা দেশে ফিরে আসবেন।’

ওই গ্রন্থেই মহিউদ্দিন আহমদ দেখানোর চেষ্টা করেছেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর কর্নেল তাহেরের যে সমস্ত কর্মকান্ডগুলো ছিলো তা বঙ্গবন্ধুর বিরু’দ্ধে ছিলো এবং ষড়’যন্ত্রকারীদের পক্ষে ছিল। এ নিয়ে তিনি একাধিক ব্যক্তিরও সাক্ষাৎকার এই গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন।

সে করণেই প্রশ্ন উঠেছে, যদি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল হয় তাহলে কর্নেল তাহেরের খেতাব বাতিল হবে না কেন। মজার ব্যাপার হলো, জামুকার বৈঠকে যিনি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি হলেন শাজাহান খান এবং তিনিও একজন সাবেক জাসদ নেতা।

৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর জাসদের যে ভূমিকা ছিল এবং জাসদের উ’স্কানী, তাদের গণবাহিনী সারাদেশে লু’টতরাজ এবং বঙ্গবন্ধু বিরোধী অপপ্রচার করে তারা যে ১৫ আগস্টের একটি পটভূমি তৈরি করেছিল, সেই ইতিহাস জাসদ সব সময় আড়াল করতে চায়।

এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়ে তারা আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ সাজে। আর এজন্যই অনেকে মনে করেন, জাতির পিতা হ’ত্যাকান্ডের বিচারের রায়ে যারা ওই ঘটনার নেপথ্যে ছিল তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

সেই রায় অনুযায়ী যদি একটি কমিশন গঠন করা হয় এবং নেপথ্যে যারা জড়িত ছিল তাদের খুঁজে বের করা হয়, তাহলে প্রকৃত ইতিহাস জাতি জানতে পারবে এবং ভবিষ্যতে নতুন করে যেন কেউ মোশতাক হয়ে না উঠতে পারে সে ব্যাপারেও সব রাজনৈতিক মহল সচেতন হবে। বাংলাইনসাইডার।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!