সময় এখন ডেস্ক:
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়েরকৃত দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা আবারও বিশেষ বিবেচনায় ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে খালেদা জিয়া আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফিরোজায় মুক্ত জীবন যাপন করতে পারবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন। সাংবিধানিকভাবে নির্বাহী আদেশের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন হওয়ার পরপরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে খালেদা জিয়ার পরিবার এই ৬ মাসের জামিনের বিষয়ে সন্তুষ্ট নয়।
খালেদা জিয়ার পরিবারের সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী যদি খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি না দেন তাহলে তারা পুনরায় আবেদন করবেন। এ নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করারও আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম জেলে গিয়েছিলেন। গত বছরের ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুকম্পায় তিনি জামিন পান এবং এখন পর্যন্ত তিনি মুক্ত আছেন। দুই দফায় তার মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস করে বাড়ানো হয়েছে এবং তৃতীয় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ যদি চূড়ান্তভাবে বাড়ানো হয় তাহলে ৬ মাস তার জামিনের মেয়াদ বাড়বে।
তবে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যে কোন শর্তে খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে আগ্রহী এবং এজন্য যদি তাকে রাজনীতিতে সরে যেতে হয়, কোন রকম মুচলেকা দিতে হয় বা সরকারের কাছে অন্যরকম কোন শর্ত দিতে হয়, সেই শর্ত দিতেও খালেদা জিয়া রাজি।
গতকাল খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার কথা বলেছেন। এই আলাপ আলোচনায় তারা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কী করণীয় সেটি চূড়ান্ত করার বিষয়ে কথা বলেছেন। যেহেতু এটি সরকারের একটি নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছে কাজেই বিদেশ যাওয়া নিয়ে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন না।
কারণ আদালত থেকে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার পরিবার আদালতের মাধ্যমে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি পাওয়া যায় কি না সেই চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ইতিমধ্যে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাকচ করেছেন।
আপিল বিভাগ থেকেও খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। কাজেই আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা আছে কি না সেটি নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
তবে আইনজীবীদের মধ্যে সংশয় থাকলেও কোন কোন আইনজীবী মনে করছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বাস্তবতা বিবেচনা করে তিনি নতুন করে জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে তার পরিবার আইনী প্রক্রিয়ায় গিয়ে জামিনের এই বিষয়টিকে জটিল করা এবং খালেদা জিয়া এখন যে অবস্থায় আছে তার চেয়ে খারাপ অবস্থায় যাওয়ার ঝুঁ’কি নিতে চায় না। এ জন্যই তারা মনে করছে, সরকারের সাথে সমঝোতা করেই শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব হতে পারে।
খালেদা জিয়া পরিবারের এক সদস্য বলেছেন, আমরা যখন গত বছর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, তখন দেখেছি তিনি অত্যন্ত মানবিক একজন মানুষ। তিনি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে সবকিছু দেখেছেন। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যদি শেষ পর্যন্ত সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়, তাহলে তিনি নিশ্চই বিষয়টি সদয় বিবেচনা করবেন।
খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার বলেছেন, সরকার যে খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জন্য মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে খালেদা জিয়ার এখন উন্নত চিকিৎসার দরকার, তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ।
সেজন্য আমরা সরকারের কাছে আবার নতুন করে আবেদন করব এবং সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে হয়তো খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিবেন। বাংলাইনসাইডার।