বিশেষ প্রতিবেদন:
নোয়াখালীর রাজনীতি জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে নোয়াখালীতে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে। অপারেশন নোয়খালীতে প্রথম যে ব্যক্তিটি আটক হয়েছেন তিনি হলেন মিজানুর রহমান বাদল। যিনি ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ট হিসেবে চিহ্নিত।
নোয়াখালীর রাজনীতিতে সব সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কোণঠাসা ছিলেন। সেখানে একরামুল করিম চৌধুরীর প্রভাবই ছিল বেশি। এমনকি যে নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয়ী হয়েছেন, সেখানে একটি উপজেলায় একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত।
একরাম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরীও রাজনৈতির অঙ্গনে ঘোরাফেরা করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে নোয়াখালীর এই ঘটনায় দুই দিক থেকে চাপে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রথমত, কাদের মির্জা তার ছোট ভাই হলেও তার বিরু’দ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তার পরিবারের বিভিন্ন বিষয় তিনি প্রকাশ করেছেন।
ফলে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা শুধু নোয়াখালীতে নয়, জাতীয় রাজনীতিতে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলছেন, নিজের ভাইকে তিনি সামলাতে পারেন না, তিনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অন্য নেতাদের ম্যানেজ করবেন কীভাবে?
কাদের মির্জার অভিযোগের প্রধান টার্গেট ওবায়দুল কাদেরের সহধর্মিনী। তিনি ওই এলাকায় নির্বাচন করতে চান, এমন কথা কাদের মির্জা বিভিন্ন মহলে বলেছেন। এতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কাদের মির্জা সরাসরি বিরোধে জড়িয়েছেন একরামুল করিম চৌধুরীর সাথে।
একরামুল করিমের সাথে ওবায়দুল কাদেরের বিরোধ পুরোনো। ওবায়দুল কাদেরের বিরু’দ্ধে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচন করেছিলেন। তাতে তিনি ৪০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। পরে ২০০১ সালে সমঝোতার ভিত্তিতে দুইজনের নির্বাচনী এলাকা আলাদা করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এখনো নোয়াখালীর রাজনীতিতে একরামুল করিম চৌধুরী প্রভাব বেশি। এরকম বাস্তবতায় কাদের মির্জা ও একরাম চৌধুরীর বিরোধের ঢেউ ওবায়দুল কাদেরের ওপরে আছড়ে পড়ছে বলে অনেকের ধারণা। এতে মূলত কাদের পরিবারের বিরু’দ্ধেই একরামুল করিমের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে যে কোনো দিক থেকেই নোয়াখালীর রাজনীতিতে সবচেয়ে ক্ষ’তিগ্রস্ত ব্যক্তিটির নাম ওবায়দুল কাদের।
শুধু নোয়াখালীর রাজনীতিতে নয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের অর্ধেকটা সময় পর্যন্ত যিনি নির্বি’ঘ্নে এবং প্রতাপ নিয়ে দায়িত্ব পালন করলেন, শেষ সময়ে এসে যেন সবকিছুর খেই হারিয়ে ফেলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নোয়াখালীর ঘটনা ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য একটি বড় দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এখানে অনেকগুলো সেনসিটিভ ইস্যু সামনে চলে আসছে, যা প্রকাশ্যে আলোচিত হতো না।
যেমন, প্রথম আলো পত্রিকার সৃষ্ট গুজব- ওবায়দুল কাদেরের রাষ্ট্রপতি হওয়া নিয়ে আলোচনা এবং তার সহধর্মীনীর এমপি হওয়ার বিষয়। এই মুখরোচক গুজবগুলো ওবায়দুল কাদেরের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দাগ ফেলেছে। যদিও এখানে তার কোনো দায় নেই। দেশের শীর্ষ এই পত্রিকাটি চা দোকানে চা খেতে এসে গালগল্প করা সাধারণ মানুষের মুখে আষাঢ়ে গল্পকেও জাতীয় রাজনীতিতে ইস্যু তৈরী করে। যার পেছনে লক্ষ্য একটাই, দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলটিকে বিত’র্কিত করা।
আগামী কাউন্সিলে ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক অবস্থান এবং দলে তার প্রভাব কতটুকু থাকবে সে নিয়েও অনেকের প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যেই নোয়াখালীর টানা আড়াই মাসের ঘটনা দলে ওবায়দুল কাদেরের যে কর্তৃত্ব ও প্রভাব তা অনেকখানি খর্ব করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা নানা রকম কথাবর্তাও বলা শুরু করছেন। এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী কাউন্সিলে ওবায়দুল কাদেরকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিশ্চতভাবেই নোয়াখালীর বিষয়টি মাথায় রাখবেন, এটা মনে করেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই।
আর এর ফলে ওবায়দুল কাদেরের যে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদেরের প্রস্থান পথে নোয়াখালী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে অনেকের মত। বাংলাইনসাইডার।