বিশেষ প্রতিবেদন:
এতদিন জিয়াউর রহমানকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক মেনে বিএনপির পক্ষ থেকে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল, এবার তাদের মুখে ছাই দিয়ে বেরিয়ে এলো আসল তথ্য। একটি পুরনো পত্রিকার কপির মারফৎ জানা গেলো, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ সম্বোধন করতেন।
অথচ এ বিষয়টি গোপন করে উপরন্তু বিএনপির নেতৃবৃন্দ ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলে আসছিল, স্বাধীনতা কিংবা দেশ গঠনে জিয়াই সর্বসবা, বাকি সব মিথ্যে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে অদ্যাবধি বিএনপি উঁচু গলায় বলে আসছিল, জিয়াউর রহমানই দেশের জন্য সব করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কোনো অবদান নেই। এ কারণে দলটির নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ ডাকতেও নারাজ। এমনকি ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভার ব্যানারে পর্যন্ত ছিল না বঙ্গবন্ধুর ছবি বা নাম!
বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিএনপির নেতারা নেতিবাচক বক্তৃতা-বিবৃতিও দিয়েছেন। কিন্তু এবার পাওয়া উঠে এলো এমন তথ্য, যেখানে জানা যাচ্ছে জিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার মনোভাবের কথা।
বিএনপি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দিনটি নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচারমূলক বক্তব্য দিলেও দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বীকার করেছেন দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা।
যার খোঁজ পাওয়া গেছে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বিচিত্রার একটি সংখ্যায় জিয়ার লেখা একটি প্রবন্ধে। একটি জাতির জন্ম- শীর্ষক সেই প্রবন্ধে জিয়া নিজেই লেখেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণই ছিল তার স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা। শুধু তাই নয়, পাকিস্থান সেনাবাহিনীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিষোদগার করা হতো। যেটা ছিল অনুচিত।
ওই লেখার একাংশে তিনি আরও লিখেছেন, এলো ১ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সারাদেশে শুরু হলো ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলন।
কিন্তু বিএনপি এখনও ইতিহাস বিকৃতির ঐতিহ্য লালন করে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতার স্বীকৃতি দিতে আপত্তি জানায়। অথচ পরিস্কারভাবে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজেই নিজের লেখায় শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিকৃত মনোভাব নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি, জাতির পিতাকে অস্বীকার ও সরকারের বিরু’দ্ধাচারণই বিএনপির রাজনীতির মূলমন্ত্র। অথচ তাদের প্রতিষ্ঠাতা এমন ছিলেন না। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সগর্বে-সহাস্যে ‘জাতির পিতা’ বলেই সম্বোধন করতেন; অন্তত ৭৫ এর আগ পর্যন্ত।
যার অদ্বিতীয় প্রমাণ সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত এই লেখা। তবুও বিএনপি নেতৃবৃন্দের ঘুম ভাঙবে না। দূর হবে না বঙ্গবন্ধু ও সরকারের বিরু’দ্ধে মিথ্যাচারণ করা। এ থেকেই তাদের হীন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ মেলে। প্রমাণ মেলে বিকৃত রাজনৈতিক আদর্শেরও।
৭৫ এর পর জিয়া বঙ্গবন্ধুর সকল চিহ্ন ও নিদর্শন এবং ইতিহাস মুছে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করেন। যার ফলে বিএনপির তৎকালীন নেতৃবৃন্দের মনোভাবটাও বদলে যায়। তারাও বঙ্গবন্ধুর নামে বিষোদ্গার শুরু করেন। তার অবদানকে খাটো করতে শুরু করেন। বর্তমান বিএনপি সেই ধারার বাইরে নয়।
210