সময় এখন ডেস্ক:
দীর্ঘ চিকিৎসায় জোড়া মাথা আলাদা হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি গেল পাবনার দুই বোন রাবেয়া-রোকেয়া।
সফল চিকিৎসা শেষে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে রাবেয়া-রোকেয়ার গৃহে প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে রোববার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী রাবেয়া-রোকেয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
কেমন আছো, প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে দুই বোনের একজনও বলে, ভালো, তুমি কেমন আছো?
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হেসে ওঠেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভালো? বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি?
এই সময় মাথা নেড়ে খুশির কথা জানায় শিশুটি।
এর আগে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, আজকে রাবেয়া-রোকেয়া বাড়ি ফিরে যাবে। বাবা মা’র কোলে তারা হেসে-খেলে বেড়াবে, এটা সত্যিই খুব বড় পাওয়া।
আমরা যেখানে মুজিববর্ষ পালন করছি, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা উদযাপন করছি, এই বছরে সেই সময়ে এত বড় একটা সফল সার্জারি করা, সফলতা অর্জন করা, এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বিরাট অর্জন।
২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার চাটমোহরের আটলংকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন দম্পতির ঘরে জোড়া মাথা নিয়ে জন্ম নেয় রাবেয়া-রোকেয়া।
ছোট বোন শেখ রেহানার মাধ্যমে রাবেয়া-রোকেয়ার কথা প্রথম জানতে পারেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে (শেখ রেহানা) পত্রিকায় এটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একটা মেসেজ দিল যে, তুমি দেখ, এই রকম দুটো বাচ্চা, কী করা যায়। চিকিৎসার জন্য কিছু করা যায় কি না করো। আমি সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিলাম।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতেই দেশে-বিদেশে চিকিৎসা পায় দুই শিশু। হাঙ্গেরি সরকারের সহযোগিতায় অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশনের সক্রিয় অংশগ্রহণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাঙ্গেরিতে তাদের ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৮টি সার্জারি হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ০১-০৩ আগস্ট রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৩৩ ঘণ্টার সার্জারিতে জোড়া মাথার জমজ শিশু রাবেয়া-রোকেয়ার খুলি ও ব্রেন সফলভাবে আলাদা করা হয়। এ ধরনের সার্জারি সারা বিশ্বেই বিরল এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। অপারেশন পরর্বতী সাফল্যও বিশ্বে খুব বেশি নয়।
জটিল এ সার্জারির নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ফ্রিডম’। এই অপারেশনে ৩৪ জন হাঙ্গেরিয়ান সার্জিক্যাল টিম এবং হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে সিএমএইচের নিউরো অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, নিউরো ও প্লাস্টিক সার্জনসহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের শতাধিক সার্জন ও অ্যানেসথেসিওলজিস্ট অংশ নেন।
মূল সার্জারির পরে বিভিন্ন ধাপে শিশু দু’টির আরও বেশ কয়েকটি সার্জারি সম্পন্ন হয়। সবশেষ ২০২০ এর ২৮ অক্টোবর তাদের ৪র্থ ধাপের সার্জারি হয়। জন্মগত অন্য কিছু সমস্যা ছাড়া শিশু দু’টি বর্তমানে প্রায় সুস্থ আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আজকে সত্যিই খুব আনন্দিত এত দীর্ঘ চিকিৎসার পর রাবেয়া-রোকেয়ার সফল সার্জারি হয়েছে এবং এই মার্চ মাস বাঙালির ইতিহাসের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসেই আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছেন। এই মাসেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আবার এই মাস থেকেই কিন্তু আমাদের ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু।
সেই মার্চ মাসেই আজকে আমাদের প্রিয় রাবেয়া-রোকেয়া নিজের ঘরে ফিরে যাচ্ছে এবং মা-বাবার কোলে আজকে দুই বোন। এটা সত্যিই খুব আনন্দের। সত্যিই অন্য রকম অনুভূতি।
দুই শিশুর চিকিৎসার ব্যাপারে শুরু থেকেই চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, কর্মচারীসহ সবার সহানুভূতি ছিল বলেও জানান সরকারপ্রধান।
রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসায় হাঙ্গেরিয়ান প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশনের এগিয়ে আসা এবং তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা পাঠিয়ে তাদের দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা খুব অদ্ভুত ব্যাপার। রাবেয়া-রোকেয়া যে জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যেটাকে বলে ‘ক্রেনিয় পেগাজ’। এই ধরনের ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এই জোড়া মুক্ত করা এটাও সম্পূর্ণ নতুন একটা কাজ। এটা অত্যন্ত সফলভাবে যে করতে পেরেছেন, সেই জন্য ধন্যবাদ জানাই।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল প্রান্তে এই সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাবেয়া-রোকেয়ার মা তাদের সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের চিকিৎসদের আন্তরিক ধন্যবাদ দেন ও তাদের জন্য দোয়া করেন।
