লন্ডনে তারেকের আয়ের উৎস কী, জানেন না বিএনপি নেতারা! (ভিডিও)

0

সময় এখন ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় সাময়িক মুক্তিপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ভিডিও বার্তা দেওয়া ছাড়া লন্ডনে বসবাসরত দলটির ভারপ্রাপ্ত পলাতক চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আর কোনও উদ্যোগ দেখেননি নেতাকর্মীরা। বরং লন্ডনের বিভিন্ন নামিদামি নাইটক্লাব, ক্যাসিনোতে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি, বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি নিয়ে মেতে থাকতে দেখা যায় প্রায়ই।

খালেদা জিয়ার মুক্তি বা চিকিৎসার ব্যাপারে উদ্যোগের পরিবর্তে তার এসব আমোদ-ফূর্তি নিয়ে ব্রিটেনে বসবাসরত দলটির কর্মী-সমর্থকদের অনেককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেন। অগোছালো বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এমন বিলাসবহুল জীবন যাপনের দৃশ্যে নেতাকর্মীদের অনেকেই অ’সন্তোষ প্রকাশ করেন। সবারই প্রশ্ন একটাই, লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের আয়ের উৎস কী? বিলাসবহুল কয়েকটি বাড়ি এবং দামি দামি গাড়িসহ এত সম্পদ কীভাবে গড়েছেন তিনি?

ব্রিটেনে বসবাসরত বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, লন্ডনে বিএনপিতে গত এক যুগে তারেক রহমানকে ঘিরে একটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে এ বলয়ে পুরনো অনেকে বাদ পড়েছেন, আবার যুক্ত হয়েছেন নতুন মুখ। নির্দিষ্ট এ বলয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তারেক রহমান।

পছন্দের মানুষদের বিয়েতে উপস্থিতি থাকলেও দলের বর্ষীয়ান গুরুতর অসুস্থ নেতাদের দেখতে যাওয়ার অবসর পান না তিনি। অথচ গত ১৩ বছরে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বহুবার সফর করেছেন তিনি।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কমিটির ৫ জন জ্যেষ্ঠ নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্ব, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে তার ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন প্রতিবেদকের সঙ্গে। তারা তথ্য ও বিভিন্ন প্রমাণাদি দিলেও নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে একেবারেই নারাজ। তাদের বক্তব্য, দল করা তো বাদ দেবো না; দলের মালিক যিনি সেই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কথা বললে তো দল করতে পারবো না।

লন্ডনে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এই নেতারাও বলতে পারেননি লন্ডনে তারেক রহমান কী করেন, তার পেশা কী, আয়ের উৎস কী। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলেননি।

জানা গে‌ছে, ১/১১’র পর দেশ থেকে মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার নামে লন্ডনে এসে কিংসটন এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাক‌তেন তা‌রেক রহমান। আকারে ওই বা‌ড়ি‌টি ছোট হওয়ায় একই সড়কের নতুন একটি বিলাসবহুল বাড়ি কেনেন। যার মূল্য ১৫ লক্ষ পাউন্ড। বর্তমানে আরও বিলাসবহুল আরেকটি বাড়ি কিনেছেন হোয়াইট রিজে। যার মূল্য ৪৫ লক্ষ পাউন্ড।

তারেকের সঙ্গে স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানও থাকেন। জাইমা লন্ড‌নের কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয় থে‌কে আইনে স্না‌ত‌কোত্তর ডি‌গ্রি সম্পন্ন ক‌রে‌ছেন। তাদের পরিবারে রয়েছে ৫টি বিলাসবহুল গাড়ি। যার মধ্যে রয়েছে- মার্সিডিজ বেঞ্জ ১টি, ল্যান্ডরোভার জিপ ১টি, ল্যান্ডক্রুজার জিপ ১টি, লেক্সাস ১টি এবং ১টি বিএমডব্লিউ গাড়ি।

তারেকের ছোট ভাই প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শ‌র্মিলা রহমান সিঁ‌থিও নিজের মেয়েদের নি‌য়ে মাল‌য়ে‌শিয়া ছে‌ড়ে লন্ড‌নে বসবাস শুরু ক‌রেন। তারাও থা‌কেন লন্ড‌নের কিংসটন এলাকার আরেকটি বিলাসবহুল বাড়িতে।

অসুস্থ দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্তির জন্য শেখ হাসিনার দয়ার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। নিজের দল বিএনপি মৃ’তপ্রায়, নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হতাশ। কিন্তু প্রায়ই তারেক রহমানকে দেখা যায় বিভিন্ন নাইটক্লাব, ক্যাসিনো, ড্যান্সবারসহ রঙিন জগতে আমোদ ফূর্তিতে ব্যস্ত। বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে ব্রি‌টিশ বাংলাদেশি এম‌পিরাও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে আসেন। কিন্তু গত ১৩ বছরে কোনও জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণে যাননি তারেক রহমান।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেকের সঙ্গে ফোনে ও খুদেবার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমনকি দেশে বিএনপির নেতকর্মীরা পর্যন্ত বলেন, তারেক রহমানের বিলাসবহুল জীবন যাপনের পেছনে ব্যয় হওয়া সব অর্থ যায় বাংলাদেশ থেকেই। দলেল বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের সকল কমিটি- এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটির জন্যও স্কাইপে সাক্ষাৎকার দিতে হয় তারেক রহমানকে। তিনি সন্তুষ্ট হলে অনুমোদন পায় কমিটি। এছাড়া রয়েছে নির্বাচনে মনোনয়ন। সেটাও একই প্রক্রিয়ায় স্কাইপে সন্তুষ্ট করতে পারলে পাবেন দলের টিকেট।

তারা আরও অভিযোগ করেন, বিএনপিতে কমিটিতে জায়গা কিংবা মনোনয় পাওয়ার ক্ষেত্রে ফ্রি বলে কিছু নেই। পদ এবং মনোনয়নের নিলামের দৌড়ে যে এগিয়ে থাকবেন, লন্ডনের দানবাক্সে যে যত বেশি অর্থ ঢালতে পারবেন, তার অবস্থান ততটাই মজবুত। এসব ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটি কিংবা শীর্ষ নেতাদের সাথে কোনো আলাপ পর্যন্ত করেন না তারেক রহমান। বিভিন্ন চ্যানেলে এসব অর্থ পৌঁছে যায় লন্ডনে। এজন্য মিডিয়া হিসেবে কাজ করেন ব্যবসায়ী ও বিশ্বস্ত কয়েকজন নেতা।

এমনই একজনের নাম শামসুজ্জোহা ফরহাদ। তিনি তারেক রহমানের সাম্রাজ্য- হাওয়া ভবনের অনেক পুরনো ও বিশ্বস্ত কর্মচারী। দুদক তার নামে মামলা করেছিল। ফরহাদ ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষে’ধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, পলাতক তারেক রহমানকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে নিয়মিত অর্থ পাঠান শামসুজ্জোহা। হাওয়া ভবনের সাবেক এই কর্মচারীর বিপুল পরিমাণ অর্থের আসল মালিক তারেক রহমান বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। প্রায় শত কোটি টাকার ওই সম্পদের মধ্যে রয়েছে বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, মেয়াদি আমানতসহ (এফডিআর) অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। ওই সব সম্পদ থেকে তারেক রহমানকে নিয়মিত টাকা পাঠান শামসুজ্জোহা।

দুদকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, তারেক রহমানের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে নিয়মিতভাবে অর্থ পাঠাচ্ছেন হাওয়া ভবনের সাবেক একজন সাধারণ কর্মচারী। তার নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। সে অর্থের উৎস খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান করছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিজের অ’বৈধ সম্পদ নিরাপদ রাখতে অফিসের একজন সাধারণ কর্মীর নামে সম্পদ রেখেছেন তারেক রহমান। এ বিষয়ে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে।

ঢাকা থেকে তারেক রহমানের কাছে অর্থ পাঠানোর তথ্য এরই মধ্যে দুদক পেয়েছে। ফরহাদের নামে রাখা ফ্ল্যাট, বাড়ি, ব্যাংক হিসাব, মেয়াদি আমানতসহ অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের দলিলপত্র ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, রূপনগর, পূর্বাচলসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ফরহাদের নামে ৬-৭টি বাড়ি, ৯-১০টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। হাওয়া ভবনের অল্প বেতনের কর্মচারী ফরহাদের নামে এসব সম্পদ কেনা হয়েছে সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের সময়।

সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা আছে। রয়েছে অনেকগুলো মেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট)। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে আছে রাইস মিল, মৎস্য খামার, ইটের ভাটা। এ ছাড়া মিঠাপুকুরে কেনা হয়েছে প্রচুর জমি।

দুদক সূত্র জানায়, শামসুজ্জোহা ফরহাদ বর্তমানে মিরপুরের রূপনগরে একটি ৬ তলা বাড়িতে থাকেন। ফরহাদ ১৯৯৪ সালে তারেক রহমানের মামা প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের মালিকানাধীন মার্শাল ডিষ্টিলারিতে কাজ করেন। সে সুবাদে তারেক রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয়। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে তাকে হাওয়া ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে খুবই অল্প বেতনে হাওয়া ভবনে চাকরি করতেন।

এছাড়াও দেশ থেকে তারেকের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর নাম গোল্ডেন মনির। সেলসম্যান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক গোল্ডেন মনির গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত নিয়মিতই দেশ থেকে লন্ডনে টাকা পাঠাতেন। রাজউকের আড়াইশ প্লটের মালিক সোনা চোরা কারবারি এই মনির। গাড়ি ব্যবসার আড়ালে করতেন যাবতীয় স্মাগলিংয়ের কাজ।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের হাত ধরে রাজউকের গডফাদার হয়ে উঠেছিলেন গোল্ডেন মনির। বিএনপি সরকার না থাকলেও গোল্ডেন মনিরের আধি’পত্য তাতে বিন্দুমাত্র কমেনি বরং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিনি আস্তে আস্তে বিস্তৃত করেছেন তার নেটওয়ার্ক, রাজউককে রেখেছিলেন হাতের মুঠোয়।

রাজউকে তিনি ভিআইপি মর্যাদা পেতেন। এছাড়া রাজউকের চেয়ারম্যানের কক্ষে তিনি যখন তখন ঢুকতে পারতেন। তার পরামর্শের দিকেই তাকিয়ে থাকতো রাজউকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব-এর মুখপাত্র কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, তারা প্রাথমিক অনুসন্ধানে গোল্ডেন মনিরের ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ এবং ২০২টি প্লট ও বাড়ির তথ্য পেয়েছেন। তার ২৫টি ব্যাংক একাউন্টে আছে ৯৫০ কোটি টাকা। তার ব্যবসার লাভের বখরা চলে যায় লন্ডনে।

অথচ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমকে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির একটি টকশোতে অপর কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা চেপে ধরেন তারেক রহমানের আয়ের উৎস কী- জানতে চেয়ে। রবিউল আলম এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার বহু চেষ্টা করেন, এক পর্যায়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেশ চটে যান। লাইভ অনুষ্ঠানে বেশ চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন। তবুও তারেক রহমানের লন্ডনে বিলাসবহুল জীবন যাপনের পেছনে আর্থিক উৎস জানাননি।

এ নিয়ে গাজী টিভিতেও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তারেক রহমানের মালিকানায় থাকা লন্ডনে একাধিক বাড়ি, গাড়িসহ বিলাসী জীবন যাপনের কথা। সেই সাথে উঠে এসেছে কমিটি ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশ থেকে নেতাদের কাছ থেকে আদায়কৃত বিপুল অর্থের কথাও। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা একটি রাজনৈতিক দলের সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক নেতার এমন জীবন যাপনে অবাক খোদ নিজ দলের নেতাকর্মীরাই।

তারা জানতে চান, আর কতদিন এভাবে অপ-রাজনীতির চর্চা চালিয়ে যাবেন তারেক? বিদেশে বসে সরকারবিরোধীতার নামে মাফিয়া সাম্রাজ্য চালানো তারেকের পদত্যাগ এবং নতুন নেতৃত্বের দাবি তোলেন তারা।

ভিডিও:

শেয়ার করুন !
  • 100
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!