বিশেষ প্রতিবেদন:
ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত কুমিরের খামার ‘রেপ্টাইলস ফার্ম লিমিটেড’ গড়ে তোলা মুশতাক আহমেদ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে অনুসন্ধানে।
পড়ুন: পিকে হালদারের ৬২ সহযোগী ও মুশতাক-মিসবাহর কুমিরের খামারের নেপথ্যে
কুমিরের খামারের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ভালুকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মুশতাক ছিলেন নারী ও মা’ কাসক্ত। খামার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে তিনি ভালুকায় যেতেন। তার সাথে থাকতো নতুন নতুন নারী অতিথি। তাদের নিয়ে প্রকাশ্যেই গাঁ’জা সেবন করতেন। রাতেও নারী নিয়ে সেখানে অবস্থান করতেন।
কুমিরের খামারের পুরনো কর্মচারী আবদুর রহিম বলেন, স্যার যখন খামারে আসতেন, তার সাথে নারী গেস্ট থাকতেন। তারা কেউই স্যারের স্ত্রী ছিলেন না। তবে স্যার খামার থেকে চলে যাওয়ার পর রাতের ঘটনাগুলো নিয়ে স্টাফদের মাঝে রসাত্মক আলোচনা হতো। স্যার যে রুমে নারী অতিথিকে নিয়ে থাকতেন, সকালে সেখান থেকে যাবতীয় আলামত পরিস্কার করে ফেলে দেওয়া হতো।
রহিম আরও বলেন, স্যার হেঁটে হেঁটে কুমির দেখতেন, আর গাঁ’জা খাইতেন। আমরা তার পেছনে পেছনে ঘুরতাম। গন্ধে নাক বন্ধ করে থাকতাম। কেউ কিছু বলতে পারতাম না। এভাবে তিনি যতবারই খামারে এসেছেন ততবারই সেবন করতেন।
নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারের এক কর্মকর্তা বলেন, মফিজ নামে তার চাচাতো ভাই ছিলেন। তার মাধ্যমেই গাঁ’জা সংগ্রহ করতেন। আবার কখনো কখনো তার স্ত্রীর বড় ভাই নাসিরের মাধ্যমেও সংগ্রহ করতেন। তারাই বানিয়ে সিগারেটে ভরে ভরে মুশতাকের কাছে সরবরাহ করতেন। যেটিকে তারা ‘স্টিক’ নামে ডাকতেন।
একই তথ্য দিয়েছেন খামারের নিরাপত্তা প্রহরী নজরুল ইসলাম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অতিরিক্ত গাঁ’জাসেবন ও নারী আস’ক্তির কারণেই তিনি কুমিরের খামারের মালিকানা হারিয়েছেন। কারণ তার এসব কর্মকাণ্ডে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এসব তথ্য তার মামা মিসবাহুল হকের কাছে পৌঁছালে শুরু হয় সমস্যা। তারপর তো তিনি খামারই বিক্রি করে দিয়েছেন বলে শুনেছি।
খামারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, ২০০৪-০৫ সালের মধ্যে অল্প কয়েকটি কুমির নিয়ে এই খামারের যাত্রা শুরু হয়। মুশতাক ও তার মামা মিসবাহুল হকের (সিটিসেলের বিত’র্কিত মালিক ও অ’বৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী) পরবর্তীতে এই খামারের মালিকানায় যুক্ত হন অর্থ পাচা’রকারী হিসেবে পলাতক বিত’র্কিত পি কে হালদার।
২৩ থেকে ২৫ একরের জমির ওপর বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২,৮০০ কুমির রয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১০ সালে জার্মানীতে হিমায়িত কুমির রপ্তানী করা হয়। এরপর জাপানে প্রায় ৫ দফায় কুমিরের চামড়া রপ্তানী করা হয়।
এছাড়া চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকেও কুমির নেওয়ার আগ্রহের কথা জানা গেছে। কর্মকর্তারা আরও জানান, চামড়া রপ্তানীর পর কুমিরের যেসব অংশ যেমন মাংস ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থাকে সেগুলোরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বর্তমানে খামারে প্রায় ৩০ জনের মতো জনবল রয়েছেন, যারা খামারের সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করে থাকেন।
ভালুকার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামের এই খামারে অর্ধশতাধিক মা কুমির রয়েছে। বছরে যারা প্রায় ২,২০০ ডিম দেয়। সেই ডিম ইনকিউবেটরের মাধ্যমে বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করা হয়। বাংলাইনসাইডার।
217