বিশেষ প্রতিবেদন:
আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১২ বছর ক্ষমতায় আছে। এই ১২ বছরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক চাপ, মোকাবেলা করতে হয়েছে। একটি চাপ শেষ হয়েছে নতুন চাপ এসেছে।
তবে গত ১ বছরে যেন সরকার নানারকম চাপে একটু অস্বস্তিতে আছে। একসঙ্গে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। এখন সরকার যে বিষয়গুলো নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত তার মধ্যে রয়েছে:
১. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: সামনে রোজা আসছে। কিন্তু এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। প্রতিটা জিনিসের দাম বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে তেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ এবং চালের দাম বৃদ্ধির ফলে বাজার পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারেও ভোগ্য পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। সেটার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে এবং সামনে রোজাতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারকে নতুন অস্বস্তিতে ফেলতে পারে বলে একাধিক মহল মনে করছে।
২. করোনার জোয়ার বৃদ্ধি: বাংলাদেশ করোনাকে প্রায় নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছিল। করোনায় দৈনিক আক্রা’ন্তের হার ৫০০ এর নিচে নেমে গিয়েছিল। বিশ্বে করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্যে ২০ তম হয়েছে। সেখান থেকে গত কয়েকদিনে করোনা ভাইরাসের প্র’কোপ আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানা ৪ দিন ১০০০ এর ওপর সংক্র’মণ ধরা পড়েছে।
তবে নতুন করে যদি করোনা সংক্র’মণ বাড়ে তাহলে স্কুল খোলাসহ অনেকগুলো বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। আর এখন যেহেতু মানুষ স্বাস্থ্য বৃদ্ধি মানছে না, সব কিছু খোলা এবং জনসমাগমের প্রচুর ঘটনা ঘটছে যার ফলেই নতুন সংক্র’মণ সরকারকে নতুন চাপে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
৩.আওয়ামী লীগের গ্রুপিং ও সহিং’সতা: আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এর গ্রুপিং ও সহিং’সতা সরকারের জন্য এক ধরনের নুতন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীর ঘটনা সরকারকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে আরও জেলাগুলোতে যে গ্রুপিংয়ের উ’স্কানি এবং এর ফলে যে সহিং’সতা তা সরকারের জন্য বিব্রতকর তো বটেই।
৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কিছু বাম সংগঠন আল্টিমেটাম দিয়েছে। এতে সরকার খুব একটা বিচলিত নয় কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে দেশের সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একটি ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিরোধী একটি চিহ্নিত চক্র এই আইনটির বিরু’দ্ধে ক্রমাগত কথা বলছে এবং এটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নের মুখোমুখি করছে।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি তারা পর্যালোচনা করবে এবং এর যে ক্ষ’তিকারক ধারাগুলো আছে সেগুলো কে পুনর্বিবেচনা করবে। কিন্তু নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন দূতাবাসগুলো সামনের দিনগুলোতে এই আইনটি বাতিলের জন্য সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
৫. দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা: সাম্প্রতিক সময়ে পিকে হালদারের ঘটনা, বিভিন্ন ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, স্বে’চ্ছাচারিতা দুর্নীতির বিচারে শ্লথ গতি নিয়ে এক ধরনের সমালোচনা হচ্ছে। যদিও স্বাধীন দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধে বিষয়টি দেখছে। তারপরও অনেকেই মনে করছে, দুর্নীতি দ’মনের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট স্বচ্ছ এবং আন্তরিক নয়।
এটি সরকারের জন্য একটি নতুন সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিত’র্কিত গণমাধ্যম আল-জাজিরায় ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টারস মেন` শিরোনামে বিত’র্কিত প্রতিবেদনটির পর বিভিন্ন গণমাধ্যম নানা রকম দুর্নীতি ইস্যুকে সামনে আনছে। এটি সরকারের জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে।
আগামী দিনগুলোতে সরকারকে এসব চাপ মোকাবেলা করতে হবে, জনগণের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে এই চাপগুলো মোকাবেলা করা সরকারের জন্য অত্যন্ত জরুরী। বাংলাইনসাইডার।