বিশেষ প্রতিবেদন:
নোয়াখালীর ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় কাদের মির্জাকে। অনেকের মতে, তার কারণেই নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের বিভক্তি আর সহিং’সতা। এসব ঘটনায় নোয়াখালী আওয়ামী লীগের নেতা মিজানুর রহমান বাদলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কাদের মির্জার বিরু’দ্ধে দায়ের করা হয়েছে একাধিক মামলা।
কিন্ত বাদল গ্রেপ্তার হলেও এখন পর্যন্ত কাদের মির্জার বিরু’দ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখনও প্রতি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে নানা কথাবর্তা বলছেন কাদের মির্জা। আজ দুপুরে গুরুতর কিছু অভিযোগ করেছেন তিনি। দাবি করেছেন- ওবায়দুল কাদেরের এপিএস মহিতুলকে দিয়ে তার স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদের সব খাত থেকে চাঁদা সংগ্রহ করেন। সেই টাকার একটি অংশ প্রশাসনের লোকজনের জন্য, একটি অংশ লন্ডনে তারেক জিয়ার জন্য পাঠান এবং অবশিষ্ট টাকা মন্ত্রীর স্ত্রী রেখে দেন।
মির্জা আরও দাবি করেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবের স্ত্রী নিজাম হাজারী, একরাম চৌধুরীর সন্ত্রা’সীদের দিয়ে তাকে হ’ত্যার পরিকল্পনা করছেন। ঢাকা থেকে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছে জাহাঙ্গীর নামে এক ছেলে। সে মন্ত্রণালয়ের বিআরটিএ লু’টপাট করে খাচ্ছে।
মির্জার দাবি অনুযায়ী, বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে জাহাঙ্গীর। সে এবং জুয়েল মন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশে সব করছে। এদের সঙ্গে ঢাকার ব্যবসায়ী নাজমুল হক নাজিম, উপজেলা চেয়ারম্যার মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, এস্কান্দার মির্জা শামীমও রয়েছেন।
কাদের মির্জার এসব মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছেন মির্জা। দলীয় অনুশাসন অ’মান্য করার দায়ে তার সাজাও দাবি করছেন অনেকেই।
নির্বাচনের আগে এবং পরে তিনি একইভাবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সমালোচনা করলেও তার প্রধান টার্গেট ছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। কিন্তু সম্প্রতি তার টার্গে বড়ভাই ওবায়দুল কাদের এবং তার সহধর্মিনী। গত ক’দিন ধরে তাদের নিয়ে ক্রমাগত নানাবিধ অভিযোগ আর সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন কাদের মির্জা।
অবশ্য অন্যরা যেমন কাদের মির্জার সমালোচনার জবাব দিয়েছেন, তেমনটা দিচ্ছেন না তার বড় ভাই ওবায়দুল কাদের। বরং সহ্য ক্ষমতার সর্বোচ্চ পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনার পরও কাদের মির্জার বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন উঠেছে কাদের মির্জার খুঁটির জোর কোথায়?
কাদের মির্জা যার সাহসে এবং প্রশ্রয়ে এসব কথা বলছেন, তিনি বা তারা কি তাহলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের চেয়েও ক্ষমতাবান? নাকি তারা আওয়ামী লীগের বিরোধীপক্ষ। কেউ কেউ বিএনপি জামায়াতের পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে কাদের মির্জা এমন মন্তব্য করছেন বলে দাবি করছেন।
মিজানুর রহমান বাদলকে মনে করা হতো, ওবায়দুল কাদেরের পছন্দের ব্যক্তি। নোয়াখালীতে তাকে ওবায়দুল কাদেরের লোক বলেই মনে করা হতো। সেই বাদল যখন গ্রেপ্তার হয়ে যায়, আর কাদের মির্জা যখন বড় ভাইয়ের সমালোচনায় মুখর থাকেন, তখন রাজনীতিতে অনেক প্রশ্ন সামনে চলে আসে।
প্রশ্ন আসে, তাহলে কি নোয়াখালীতে এবং জাতীয় রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদেরের প্রভাব বলয় নষ্ট হয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদেরের চেয়েও কি ক্ষমতাবান হয়ে গেছেন কাদের মির্জা? কারো কি আশীর্বাদের হাত রয়েছে কাদের মির্জার মাথার ওপর?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, সহিং’সতা, সন্ত্রা’সের কথা বাদই দিলাম। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে সমালোচনা করে প্রকাশ্য বক্তব্য দেয়াটা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ। এটা দলের চেইন অব কমান্ড নষ্ট করে।
এ ধরনের বক্তব্যের জন্যও কাদের মির্জাকে আর কিছু না হোক, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া প্রয়োজন ছিলো। যেমনটা অতীতেও করা হয়েছে অনেকের ক্ষেত্রে। কিন্তু সেটিও করা হয়নি। এর কারণ কী? এ নিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা প্রশ্ন।