বিশেষ প্রতিবেদন:
দলের একাধিক নেতাকর্মী অসুস্থ। করোনা ধরা পড়েছে ৫ জন নেতার। উদ্বেগভরা কণ্ঠে লন্ডন থেকে ‘আস্থাভাজন’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের তাই বারবার ফোন দিচ্ছেন তারেক রহমান। নিচ্ছেন সর্বশেষ খোঁজ।
বিশেষ করে দলীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খবরাখবর নিচ্ছেন দিনের মধ্যে একাধিকবার। কারণ, রিজভীই তার সকল কাজ দেখভাল করেন। তবে এতে অন্য অসুস্থ নেতা এবং তাদের পরিবার কিছুটা মনক্ষুন্ন। রিজভীর প্রতি তারেকের টান বরাবরই বেশি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর করোনা ধরা পড়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে রিজভীর অসুস্থতাই তারেককে ভাবনায় ফেলেছে।
কারণ, দেশে তার বিভিন্ন উৎস থেকে আসা আর্থিক ব্যাপার-স্যাপার, লিয়াঁজো সব কিছুর দেখভাল করতেন আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। নির্ভরতার জায়গা থেকে তাই তারেক কিছুটা বিচলিত। এতে দল নিয়ে চিন্তায় তারেক এবং শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার মতো বেশ কিছু ইস্যু হাতে রয়েছে, কিন্তু এমন সময় নেতারা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন, এটা দলের জন্য শুভ নয়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের গত ১০ মার্চ করোনা ধরা পড়ে। তিনি বর্তমানে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী সিএমএইচ-এ কোভিড আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। বুধবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১০ মার্চ জ্বর ও সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রুহুল আলম চৌধুরী। এরপর তার করোনা ধরা পড়ে।
অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদও করোনা পজিটিভ। বর্তমানে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে সর্দি জ্বর ও কাশি নিয়ে তিনি একের পর এক সভা সমাবেশ করে গেছেন। নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছেন। দলীয় কার্যালয় এবং শীর্ষ নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথেও সৌজন্য বিনিময় করেছেন।
শায়রুল কবির আরও বলেন, উক্ত নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি অন্য অসুস্থতায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবীব-উন নবী খানও সোহেল রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদেরও মাঝে মধ্যে খোঁজ নিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এদিকে জানা গেছে, দলের একাধিক দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী অসুস্থ হওয়ায় দারুণ মন খারাপ তারেক রহমানের। দলের কার্যক্রম সবই থমকে গেছে। কিন্তু এই সময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ভূমিকা দায়িত্বশীল নয়। তিনি কাউকেই হাসপাতালে দেখতে যাননি এখনও। অসুস্থ নেতৃবৃন্দের সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি তদারকি করার ব্যাপারেও তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বিষয়টি আগামী কাউন্সিলে তার পদায়নের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করে কয়েকজন নেতা।
বিএনপির সব সময় দাবি করে তারা জনবান্ধব রাজনীতি করে। কিন্তু শীর্ষ নেতারা অসুস্থ হলেও দলের অপর নেতারা তাদেরকে দেখতে হাসপাতালে যাননি, এটা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোজগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দীর্ঘদিন সরকারে না থাকায় এমনিতেই নেতাকর্মীরা বিএনপির রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন। যে কোনো সভা সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যাতেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খালেদা জিয়ার নীরবতা, তারেক রহমানের পলাতক জীবন- নেতৃত্বহীন এক রাজনৈতিক দলের চেহারা। নিউজব্যাংক।