ফখরুলের গদির দখল পাচ্ছেন দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগী রিজভী?

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ব্যাকফুটে থাকার পর বিএনপির রাজনীতিতে এবার নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে ক্ষমতার দ্বৈরথে জড়িয়ে পড়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

দলীয় নেতৃত্বসহ বিএনপির প্রাত্যহিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রভাব বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে কোল্ড ওয়ারে জড়িয়ে পড়েছেন দলের সিনিয়র দুই নেতা। মির্জা ফখরুল মহাসচিব হলেও রিজভী আহমেদ বিশেষ ক্ষমতার বলে তাকে পাশ কাটিয়ে দল চালাচ্ছেন বলে অনেকের মত। তার মাথার ওপর রয়েছে তারেক রহমানের হাত।

নয়াপল্টন বিএনপির পার্টি অফিস সূত্রের বরাতে জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনের পর কোনো সমস্যা না থাকলেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হার এর পরে একের পর এক পৌর নির্বাচনে হার থেকে দলে প্রভাব বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে আদর্শের নামে পরস্পর দ্বৈরথে জড়িয়ে পড়েছেন মির্জা ফখরুল ও রিজভী আহমেদ।

মির্জা ফখরুল কাগজে কলমে মহাসচিব হলেও দলের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে একচ্ছত্রভাবে মাথা ঘামান রিজভী। তার ইশারা ছাড়া কোথায় কোন কমিটির অনুমোদন দেয়া হয় না। গুঞ্জন রয়েছে, সারা দেশের বিএনপির রাজনীতিকে এক হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন রিজভী।

মির্জা ফখরুল দলে খালেদাপন্থী হিসেবে পরিচিত। সেই সাথে ধীর বুদ্ধিসম্পন্ন নেতা হওয়ায় তারেকপন্থী রিজভী আহমেদের অনুসারী নেতারা বরাবরই তার কার্যক্রমে অ’সন্তষ্ট। কিন্তু দলের ভাবমূর্তি ও সম্মান রক্ষার্থে মির্জা ফখরুল বছরের পর বছর রিজভীপন্থীদের এসব গঞ্জনা সহ্য করে যাচ্ছেন।

শোনা যাচ্ছে, আগামী জাতীয় কাউন্সিলে মির্জা ফখরুলকে সরিয়ে মহাসচিবের নতুন দায়িত্ব দেয়া হতে পারে রিজভী আহমেদকে। সেই বিষয়ে লন্ডন থেকে সবুজ সংকেতও পেয়েছেন রিজভী আহমেদ। সেই আভাস পেয়ে রিজভী আহমেদ তাই মির্জা ফখরুলের দায়িত্বে ভাগ বসিয়ে নিজের আগাম ক্ষমতা প্রকাশের চেষ্টা করছেন।

রিজভী আহমেদের বিরু’দ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম ক্ষমতাধর নেতা ও মহাসচিব পদের তালিকায় এগিয়ে থাকা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রিজভী আহমেদের বিষয়ে অনেক আগে থেকেই শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও অ’যাচিতভাবে ক্ষমতার অপ’ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। রিজভী তার পদের বাইরে গিয়েও কাজ করে লন্ডনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তার এসব কাজকর্ম দলের জন্য ভালো হলেও সে কিন্তু দলের চেইন অফ কমান্ড ব্রেক করে ফেলে।

তিনি আরো বলেন, রিজভীকে নিয়ে তো অভিযোগের শেষ নেই। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো! রিজভীকে তো বিএনপির আবাসিক নেতা বলেও ব্যঙ্গ করা হয়। তার বিরু’দ্ধে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন কমিটি অনুমোদন দেয়া, মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। যদিও এগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত তদন্ত করা হয়নি।

এছাড়াও রিজভীর মধ্যে সিনিয়রদের অ’বজ্ঞা ও অব’হেলা করা প্রবণতা দেখেছি আমি। সিনিয়রদের সঙ্গে থাকার সুযোগ পাওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনি সিনিয়রদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবেন। মির্জা ফখরুল সাহেবের মতো মানুষকে যে সম্মান করতে জানে না, সে কীভাবে বিএনপির রাজনীতি করবে? ফখরুল সাহেবের পর তো আমরাই দলের হাল ধরব, নাকি! আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু তো আমাদের দিতে হবে! লন্ডনের ইশারায় বেপরোয়া রাজনীতি করছে রিজভী। যা দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

দলের প্রভাব বিস্তারে সিনিয়রদের গুরুত্ব না দেয়ার বিষয়ে জানতে রিজভী আহমেদকে ফোন করলে তিনি বলেন, লন্ডন থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আমি দল পরিচালনায় সহায়তা করি। সংকটাপন্ন মুহূর্তে কে রাজা হবে আর কে উজির হবে- এসব নিয়ে যারা মাথা ঘামায় তারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঠিক আদর্শ আত্মস্থ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, পদের চেয়ে দল বড়, সেটি অনেক সিনিয়র নেতা প্রায়শই ভুলে যান। পদপ্রীতি তো আমার নেই। আমি দলকে দিতে এসেছি, নিতে নয়। তবে দল চাইলে আমি এর চেয়েও বড় দায়িত্ব পালন করতে রাজি আছি। নিউজব্যাংক।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!