বিশেষ প্রতিবেদন:
অপরাধ না করেও দীর্ঘ ৩ বছর ধরে সাজা পাচ্ছেন খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে। নিজ সন্তান ও তার বাবা-মা যাতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে সে জন্যই দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে সেবা ও সঙ্গ দেয়ার নামে স্বেচ্ছায় দেড় বছর জেলে আর বাকি দেড় বছর খালেদা জিয়ার সাথে থাকতে হচ্ছে গৃহকর্মী ফাতেমাকে। তবে এখনো কাটেনি তার পরিবারের অভাব। বর্তমানে পরিবারে দেখা দিয়েছে তীব্র অর্থসংকট।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেলে থাকলে উচ্চ বেতন-ভাতা তার পরিবারকে দেয়ার ওয়াদা করেছিল বিএনপি। কিন্তু বিগত ৯ মাস বেতন-ভাতা না দেওয়ায় বিএনপির ছলনার রাজনীতিকে দায়ী করছেন ফাতেমার বৃদ্ধ বাবা মো. রফিকুল ইসলাম। ফাতেমার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারকে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনরকম বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
গতকাল ফাতেমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে আক্ষেপের সঙ্গে এসব কথা বলেন রফিকুল। খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার সামনে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তিনি তার মেয়ের সাথে দেখা করতে না পেরে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ছলনার রাজনীতির কবলে পড়ে বিনা অপরাধে খালেদা জিয়ার পাপের ভাগীদার হয়েও ফাতেমা তিলে তিলে নিজেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে বলেও দুঃখ রফিকুলের। ফাতেমার কারণে তার পরিবার আজ না খেয়ে মরতে বসেছে। ফাতেমার এত বড় ত্যাগ সত্বেও বিএনপির ছলনার রাজনীতির অংশ হয়ে পরিবারটির এহেন করুণ দশা দলটির সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল বলেন, আমার বাড়ি ভোলা জেলার ধনেকাচা গ্রামে। এত দূর থেকে এসেও ফাতেমার সঙ্গে দেখা করতে পারলাম না। ভেবেছিলাম, যেহেতু বাসায় থাকে, সাক্ষাৎ করা যাবে। কিন্তু বাসার সামনে থাকা দারোয়ানরা আমাকে ঢুকতেই দিলো না।
ফাতেমা যে বেতন পায় তা দিয়েই আমার সংসার চলে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার মেয়ে বিএনপি নেত্রীর জন্য এত বড় বিসর্জন দিলেও বিনিময়ে পেয়েছে শুধুই ছলনা। কিছু দিন তার সাথে ভাল ব্যবহার করেছে, এমনকি তারা তার মোবাইলে কল করেও খোঁজ খবর নিতো বলে তিনি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
ফাতেমা নিয়মিত বেতন পায় কি না এমন প্রশ্নে রফিকুল এ প্রতিবেদককে বলেন, বিগত ১ বছর কোনো বেতন দেয়নি বিএনপি। প্রতি মাসের শুরুতে বিএনপি কার্যালয়ে এসে প্রতিবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে আমাকে। ফাতেমার বেতন তুলতে গিয়ে আমার জুতার তলা ক্ষয় হয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল স্যারের কাছে গেলে তিনি রিজভী স্যারের সাথে দেখা করতে বলেন। রিজভী স্যারের কাছে গেলে তিনি মির্জা আব্বাস স্যারের কথা বলেন। পরে উনার বাসায় গিয়ে আমি অপ’মানিত হয়েছি। প্রথম দিকে আবদুল আউয়াল মিন্টু সাহেবের কাছ থেকে টাকা আসত। কিন্তু পরে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। আমি ছোট একটা দোকান করি। কিন্তু তাতে আমার নিজেরই চলে না।
ফাতেমার স্বামী নাই। দুইটা ছোট বাচ্চা আছে। টাকার অভাবে তাদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। নাতি নাতিনিরা তাদের মায়ের সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু। ভোলা থেকে ঢাকায় আসা যাওয়ার খরচ অনেক। তাই তাদেরকে আসার সময় নিয়ে আসতে পারিনি। এভাবে আর কতদিন ধৈর্য্য ধরে থাকব আপনারাই বলেন। ম্যাডাম খালেদা জিয়া জেলে থাকায় বিএনপির নেতারাও কি গরীব হয়ে গেছেন? কেউ খোঁজটাও নেয় না।
রফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে আরো বলেন, আজব দুনিয়ায় বাস করছি আমরা। ফাতেমা তার ম্যাডামের জন্য জেলে থাকছে। অথচ কথা ছিল এই কাজের জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা দেয়া হবে ফাতেমার পরিবারকে।
প্রথম কয় মাস টাকা ঠিকঠাক পেলেও গত ১ বছর একটি টাকাও দেয়নি বিএনপি। ফাতেমার সঙ্গে যারা ছলনা করছে তাদের পরিণাম ভালো হবে না। তাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। নিউজব্যাংক।
122