সময় এখন ডেস্ক:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডিগবাজির লিজেন্ড বলা হয় প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে। তার রাজনৈতিক দর্শন বা আদর্শ যা-ই হোক না কেন, তার লেখা বই মানেই রাজনীতিতে রুদ্ধশ্বাস সত্যবচন।
কা’রাগারে কেমন ছিলো ২০০৭-২০০৮ নামের বইটিতে বিএনপির রাজনীতির অনেক অনিয়ম ও স্বে’চ্ছাচারিতার কথা প্রকাশ পেয়েছে। বইটির ১৭৬ এবং ১৭৭ পৃষ্ঠায় বিএনপির রাজনীতির মুখোশ উম্মোচন করেছেন তিনি। বিএনপির রাজনীতি মানেই যে ক্ষমতার দাপট, অর্থলিপ্সা, বিলাসবহুল জীবনযাপন, তা এই বইতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লিখেছেন:
মঙ্গলবার ১৬ অক্টোবর ২০০৭ দিন ১৮৭
ঈদের ছুটির কারণে চারদিন ধরে খবরের কাগজ নেই। অবশ্য আমি সেগুলোকে খুব একটা মিস্ করিনি। প্রায় একইরকম খবরে প্রত্যেকদিন ভরা থাকে কাগজগুলো, যাতে থাকে অ’বৈধ সরকারের গুণগান আর আত্মপ্রশান্তির ফিরিস্তি।
বেগম জিয়া খোকনকে বলেছেন তার চারদিকে লোকজনের করা এতসব দুর্নীতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। অথচ আমরা এতদিন ধরে তার উল্টোটাই শুনে আসছি। এটা এক আজব ধরনের ঘটনা। তার দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি খুব উদ্বিগ্ন।
বিশিষ্ট চিকিৎসক ও পিজি হাসপাতালের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. আবদুল হাদী সরকারি এজেন্টদের শারীরিক নির্যা’তন ও না’জেহাল হওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য আত্মগোপন অবস্থায় স্নায়ুবিক দু’শ্চিন্তায় জ’র্জরিত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। যৌথবাহিনী কয়েক মাস ধরে অনবরত ধাওয়া করে আসছিল তাকে। তার একমাত্র অপরাধ তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি সরকারের আমলে এবং আগামী নির্বাচনের জন্য তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতিবান একজন প্রার্থী।
বুধবার ১৭ অক্টোবর ২০০৭ দিন ১৮৮
১৯৯১-৯৬ সালের তুলনায় বিএনপি সরকারের রাজনৈতিক অবদান ২০০১-২০০৬ সালে ছিল নিঃসন্দেহে অনেক কম। এরপর আমরা ক্ষমতায় গেলে বিএনপির সাফল্য হয়তো হবে আরো কম _ কারণ দলটির শাসন কৌশলে উন্নতির কোনো স্পর্শ লাগেনি।
বিএনপির রাজনীতির ব্লাডলাইনে আত্মোপলব্ধি এবং আত্মসংশোধন শব্দ দুটির কোনো অস্তিত্ব নেই। ক্ষমতার দাপট, অর্থলো’লুপতা, বিলাসবহুল জীবনযাপন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং দুর্নীতির মাত্রা বোধহয় একই পর্যায়ে থেকে যাবে। এরপর যখনই তারা আবার ক্ষমতায় আসবে সেই শাসনকাল হবে আরো নি’কৃষ্ট।
বিশ্বপর্যায়ে বিএনপির বন্ধুহীন হয়ে পড়া এবং রাজনীতিতে প্রান্তিক অবস্থায় চলে আসার পেছনে মূল কারণ হলো দুটি। সেগুলো হলো: (১) জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে গভীর সখ্যতার কারণে বিএনপিকে চিহ্নিত করা হয়েছে এমন ইসলামী উ’গ্রবাদী শক্তির সহযোদ্ধা হিসেবে যাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়,
২) তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে থাকা লোকজনের দুর্নীতি। বিএনপি যদি এ দুয়ের গ্লা’নি কাটিয়ে ভারসাম্যময় মধ্যপন্থী গণতন্ত্রের ধারক বাহক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না এবং কোনরকমে আসতে সক্ষম হলেও বেশিদিন তা ধরে রাখতে পারবে না।
অন্যদিকে জাতি যদি নারী নেত্রীদের ব্যক্তিগত রাজনীতির প্রতি মোহান্ধ থেকে যায় তা হবে জাতির জন্য সমপরিমাণেই বিবাদময়।
186