সিলেট প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের গ্রামে তা’ণ্ডবের ঘটনায় আলোচিত ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।
শনিবার ভোর রাতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিলেটে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. খালেদ উজ জামান জানান।
তিনি বলেন, শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার মূল আসামি শহীদুল ইসলাম স্বাধীন। গ্রেপ্তার করার পর তাকে কুলাউড়া থেকে পিবিআইয়ের সিলেট কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের বাড়ি শাল্লার পাশের দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।
গত ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে তা’ণ্ডবের ঘটনায় মদদদাতা হিসেবে স্বাধীন মেম্বারের নাম আসে। ঘটনার পরদিন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়ের করা মামলাতেও স্বাধীনকে আসামি করা হয়।
ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে জেলার শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে বুধবার সকালে এই সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে।
‘মামুনুল হকের অবমাননা’ আখ্যায়িত করে ওই এলাকায় তার অনুসারীরা মঙ্গলবার রাতে মিছিল করে। এরপর বুধবার সকালে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মুসলমান নোয়াগাঁও গ্রামে সশ’স্ত্র হাম’লা চালায়। এতে গ্রামের হাজার হাজার হিন্দু ভিটেমাটি ছেড়ে পালায়। এই সুযোগে মামুনুলের অনুসারীরা গ্রামে প্রবেশ করে লু’টপাট করে শতাধিক বাড়িতে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, সেদিন এই ঘটনায় ৬০-৭০টি হিন্দু বাড়িঘর ভা’ঙচুর, লু’টপাট ও আসবাবপত্র ধ্বং’স করে মামুনুল হকের অনুসারীরা। খবর পেয়ে শাল্লা থানা পুলিশসহ ও দিরাই থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগে গত সোমবার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত ধর্মীয় সম্মেলন- শানে রিাসালত-এ যান হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
ধর্মীয় সম্মেলেনের নামে আয়োজিত সভায় রাজনৈতিক এবং উ’স্কানিমূলক বক্তব্য দেন আগত হেফাজত নেতারা। সম্মেলনে মামুনুল হকের দেওয়া তেমন এক বক্তব্যের সমালোচনা করে স্থানীয় এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি করেছে পুলিশ বাদী হয়ে। অন্যটি করেছেন হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল।
বকুলের করা মামলায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অ’জ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনকে আসামি করা হয়। ২টি মামলায় মোট দেড় সহস্রাধিক লোককে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাম’লাকারীদের বেশিরভাগই আসে যুবলীগ নেতা স্বাধীনের গ্রাম দিরাইয়ের নাচনি থেকে। স্বাধীনের উপস্থিতিতেই সেদিন এ ঘটনা ঘটে।
তদন্তকারীরা বলছেন, স্বাধীন মেম্বারের সাথে জলমহাল নিয়ে নোয়াগাঁওবাসীর পুরনো বিরোধ রয়েছে। ভিক্টিম একাধিক ব্যক্তির কথায় স্বাধীন মেম্বারের নাম এসেছে।
শহীদুল ইসলাম স্বাধীনসহ মোট ২৩ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।