সময় এখন ডেস্ক:
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভা’ঙচুর ও লু’টপাটের ঘটনায় বেরিয়ে আসছে নেপথ্যে থাকা অনেক অজানা তথ্য।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ঘটনার সঙ্গে মামুনুল হকবিরোধী ফেসবুক স্ট্যাটাসের কোনো সম্পর্ক নেই বরং জলমহাল নিয়ে পূর্ববিরোধের জের ধরে ঝুমন দাশ আপনের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে হা’তিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী অসীম চক্রবর্তী ও দীপক দাস জানান, মূল নেতৃত্বে ছিলেন দিরাই উপজেলার নাচনী গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য সরমঙ্গল ইউনিয়ন যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ও একই গ্রামের পক্কন মিয়া।
তারা জানান, স্বাধীন মেম্বার ও পক্কন মিয়ার নেতৃত্বে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তারা লোকজনকে সংগঠিত করে গ্রামে তা’ণ্ডব চালায়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাচনী গ্রামের স্বাধীন মেম্বার স্থানীয় বরাম হাওরের কুচাখাই বিলের ইজারাদার। জলমহাল নিয়ে স্বাধীনের সঙ্গে কিছুদিন ধরে ফেসবুকে পোস্টের দায়ে গ্রেপ্তারকৃত যুবক ঝুমন দাশসহ নোয়াগাঁওয়ের কিছু লোকের বিরোধ চলছিল।
জলমহালে অ’বৈধভাবে মৎস্য আহরণ ও জলমহালের পানি শুকানোর ফলে চাষাবাদে সেচের পানির সংকটের ব্যাপারে নোয়াগাঁওয়ের হরিপদ দাশ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ দন্দ্র দাস শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্বাধীন মেম্বারের বিরু’দ্ধে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ জানুয়ারি সরেজমিন কুচাখাই বিলে গিয়ে অ’বৈধ শ্যালোমেশিনসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ আটক করে জলমহালের পানি ছেড়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদির হোসেন।
এ সময় বাঁধ কাটার কাজ করেন নোয়াগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা অখিল চন্দ্র দাসের ছেলে অমর চন্দ্র দাস ও পানি ছেড়ে দেয়ার দৃশ্য ফেসবুকে প্রচার করেন একই গ্রামের ঝুমন দাশ।
এ ঘটনায় স্বাধীন মেম্বার নোয়াগাঁও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুম’কি দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভিক্টিমরা। ঝুমন দাশের এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে হেফাজতের অনুসারী ও তার নিজস্ব লোকদের দিয়ে বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটানো হয় বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসী।
তাদের দাবি, মামুনুল হকের অনুসারীদের উ’স্কে দিয়ে নিজের শরীরের ঝাল মেটাতে হিন্দুদের বাড়িতে তা’ণ্ডব চালান স্বাধীন ও তার অনুসারীরা।
নোয়াগাঁও গ্রামের ক্ষ’তিগ্রস্ত শৈলেন চন্দ্র দাশ বলেন, স্বাধীন ও পক্কনের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে। তারা আমার ঘরের টাকা-পয়সা ও সোনাদানা নিয়ে গেছে। স্বাধীনের সঙ্গে আমাদের গ্রামবাসীর সমস্যা অনেকদিনের। সে বরাম হাওরের কুচাখাই বিল সেচতে চায়, আর আমরা গ্রামবাসী বাধা দেই। বিল সেচার কারণে জমিতে পানি দেয়া যায় না।
পানির অভাবে জমি ও ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা ইউএনও সাহেবের কাজে অভিযোগ করেছি। অভিযোগকারী ছিলেন আমার কাকা হরিপদ দাশ। এ কারণেই হরিপদ বাবুর আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘর বেশি ক্ষ’তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ক্ষ’তিগ্রস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অখিল চন্দ্র দাশ বলেন, আমি ঘরে ছিলাম। আমার ঘরের দরজা ভেঙে সব কিছু ভেঙে টাকা-পয়সা ও মুক্তিযোদ্ধা সনদসহ অনেক কিছু নিয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়ার পরও তারা আমারে রেহাই দেয়নি। স্বাধীন-পক্কনের নেতৃত্বে অংশ নিয়েছে শত শত মানুষ।
আমি শুধু পক্কন মিয়া ও স্বাধীন মেম্বারকে চিনতে পেরেছি। স্বাধীন মিয়ার সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিল। ওসি ও ইউএনও সাহেব যখন বাঁধভাঙার অনুমতি দিলেন তখন আমার ছেলে অমর চন্দ্র দাশ বাঁধ কাটে। এ কারণেই সে আমার ঘরে বেশি ভা’ঙচুর করেছে। এ ঘটনায় স্বাধীন মেম্বারের বিচারের দাবি করেন তিনি।
এদিকে নোয়াগাঁও মাঠে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নাটেরগুরু স্বাধীনসহ সব অপরাধীর গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
মামলা দায়েরের পর ২২ আজ সকালে স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পক্কন মিয়া এখনও পলাতক।
পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, এ ঘটনার পেছনে যারা জড়িত আছে সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। কেউই রেহাই পাবে না।
গ্রেপ্তারের আগে সব অভিযোগ অ’স্বীকার করে গতকাল স্বাধীন মেম্বার দাবি করেন, আমি এ ঘটনায় জড়িত নই। নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর সঙ্গে জলমহাল নিয়ে আমার বিরোধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার শাল্লা থানায় বসা হয়েছে। তারা আমাকে ফাঁ’সানোর জন্য আমার নাম বলছে।
শুক্রবার নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ক্ষ’তিগ্রস্তদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ (পিপিএম), জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আলোচিত স্বাধীন মেম্বারসহ সবাইকে দ্রুত সময়ে আইনের আওতায় আনা হবে।
এরপরই মূলত আজ সকালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই টিমের হাতে গ্রেপ্তার হন ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ও ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন।
যুগান্তরের সৌজন্যে: