নারায়ণগঞ্জের গ্রামে গ্রামে পলিথিনের বেলুনে রান্নার গ্যাস!

0

সময় এখন ডেস্ক:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১৫টি গ্রামের বাড়িঘরের ভেতর, বারান্দায়, ছাদে, গাছে রঙ-বেরঙের বড় লম্বাটে পলিথিনের বেলুন বিশেষভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে। পলিথিনের বেলুনের ভেতরে দুদিক থেকে প্লাস্টিকের পাইপ ঢোকানো। পাইপের একটি মুখ গ্যাসের চুলার সঙ্গে, অন্যটি গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে যুক্ত।

স্থানীয়রা জানান, এ পলিথিনের বেলুনগুলো গ্যাস ভর্তি। তারা এভাবে পলিথিনে গ্যাস সংরক্ষণ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন।

সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের খামারপাড়া, তালাশকুর ও নগরপাড়া এলাকায় ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ সময় ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে দেখে অনেকেই পলিথিনের বেলুন খুলে ফেলতে শুরু করেন। আবার কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের গ্যাস দেওয়া হলে এগুলো ব্যবহার করবো না।

স্থানীয় বাসিন্দা ফজিলা বেগম বলেন, সারাদিনে গ্যাস থাকে না। তাই গভীর রাতে এ পলিথিনে গ্যাস ভরে রাখি। তা দিয়ে দিনের বেলায় রান্না করি। একবার গ্যাস ভরে রাখলে দুদিন রান্না করা যায়। আর গ্যাস ভর্তি পলিথিন বেলুনটা থাকে ঘরের আড়ার ওপরে। গত কয়েকদিন আগেই সবার দেখাদেখি আমিও বাজার থেকে পলিথিন এনে লোক দিয়ে বানিয়েছি। মানুষের মুখে শুনলাম গ্যাস অফিসের লোক আসছে তাই খুলে ফেলেছি।

তিনি আরও বলেন, পলিথিন, রশি, পাইপ ও কিছু যন্ত্রপাতির সাহায্যে এটা বানানো হয়েছে। এটি বানাতে ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। রাতে যখন বেশি গ্যাস আসে তখন পাইপের একটা মুখ খুলে দিলে গ্যাস ভরে যায়। পুরো পলিথিন গ্যাসে ভরে গেলে আবার পাইপের মুখ বেঁধে রাখি। সকালে চুলা জ্বালালে বেলুনের জমে থাকা গ্যাস দিয়ে রান্না করা যায়।

এলাকাবাসী জানান, ২০১৫ সালের শুরুতে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে অ’বৈধ গ্যাস সঞ্চালন লাইন টানা হয়। এ লাইন থেকে সংযোগ নিতে প্রতি বাড়ি থেকে এককালীন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয় স্থানীয়রা। যারা গ্যাসের সংযোগ নিজের বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করছেন তারা এখনো বিল দেননি।

ফলে, গ্যাসের চাপ বাড়াতে কেউ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডকে অভিযোগ জানাতে পারেন না। এজন্য রিস্ক জেনেও ১৫টি গ্রামের সাধারণ মানুষ কয়েক শতাধিক বাড়িতে এভাবে পলিথিনে গ্যাস সংরক্ষণ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন।

নিজে পলিথিনে গ্যাস জমা করেন না দাবি করে আলী মুহাম্মদ শাওন বলেন, রাত ২টার দিকে গ্যাস আসে, আবার ফজরের আজানের সময় চলে যায়। এজন্য কিছু লোক অভিনব কায়দায় গ্যাস জমা করে। গ্যাসের বিল নির্ধারণ করা হয়নি। আমাদের সারাক্ষণ গ্যাস দিলে আমরা বিল দিয়ে দিব।

অ’বৈধ গ্যাস লাইন কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি (নাম জিজ্ঞাস করলে বলেন, জানি না) সংযোগের জন্য প্রতিঘর থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। তারাই বলেছে পরে বৈধ করে দেবে। তবে, এখনো লাইন বৈধ করেনি। আর তিতাস থেকে কোনো লোক যোগাযোগ করেনি।

ঘরের ভেতর রাখা গ্যাস ভর্তি পলিথিন বেলুন, তার পাশের বিছানায় শুয়ে আছে কয়েক মাসের শিশু সন্তান। বড় ধরণের বিপদ হতে পারে, তা জানেন কি না জানতে চাইলে স্থানীয় কামাল হোসেন বলেন, একটু রিস্ক তো আছে। তবে, এখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। দশজনে ব্যবহার করে দেখাদেখি আমিও করছি।

তিনি বলেন, তালাশকুর গ্রামেই প্রথম পলিথিনে গ্যাস জমানো শুরু হয়। পরে সবাই দেখে শুরু করে। এ ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম আছে। আর ১৫টি গ্রামে দুই থেকে আড়াই হাজার বাড়িতে এভাবে গ্যাস জমানো হয়। এর জন্য ১২০০ টাকার মতো খরচ হয়।

সেতারা বেগম বলেন, এইডা আর কী হবে, সবইতো উড়ে যায়। কিছু হবে না। সবাই ব্যবহার করছে তাই আমরাও নিছি।

নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ মো. শাহ আলম বলেন, এটি খুবই রিস্কি। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে তাদের সর্তক করব।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সোনারগাঁও জোনাল বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মিজবাহ-উর-রহমান বলেন, এভাবে গ্যাস সংরক্ষণ অত্যন্ত রিস্কি। কায়েতপাড়া এলাকায় আমাদের বৈধ কোনো গ্যাস লাইন নেই। যারা ব্যবহার করছে তা পুরোপুরি অ’বৈধ।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যারা করছে তাদের বিরু’দ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, বিষয়টা আমি শুনেছি। কিন্তু, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা কীভাবে সম্ভব। অচিরেই আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। ডেইলিস্টার।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!