বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক:
শুক্রাণু নেই, ডিম্বাণুও নেই। নিষেকও হয়নি। তা-ও জন্ম নিয়েছে মানবভ্রূণ। চিন্তা-ভাবনারও যা বাইরে, তা-ই করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা।
এই প্রথম গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে মানবভ্রূণের আদিদশা তৈরি করা হয়েছে। যে কোষ মায়ের গর্ভে বেড়ে মানবশিশুর চেহারা নেবে, তারই প্রাথমিক রূপটা তৈরি করে ফেলেছেন গবেষকরা। সোজা কথায় বলতে গেলে, কৃত্রিমভাবে মানুষ তৈরির প্রক্রিয়ার প্রথম সিঁড়িতে পা দিয়ে ফেলেছেন গবেষকরা।
স্ত্রী ও পুরুষের শরীর থেকে নেওয়া ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ছাড়াই কৃত্রিমভাবে মানুষের ভ্রূণ তৈরি করার চেষ্টা চলছিল বহু বছর ধরেই। নানা রকম গবেষণা হয়েছে। কিন্তু বারবারই ব্যর্থতা এসেছে। সেই সঙ্গে নীতিগতভাবে নানা নিয়ম-কানুনের বাধাও টপকাতে হয়েছে।
একই মানুষের প্রতিরূপ বা হিউম্যান ক্লোনিং নিয়ে বিস্তর তর্কবি’তর্ক, আইনি ঝামেলা, প্রতিবাদ-আন্দোলন সবই হয়েছে। এই গবেষণার ওপর নিষে’ধাজ্ঞাও চাপানো হয়েছে। একই রকম সমস্যা ছিল কৃত্রিমভাবে মানবভ্রূণ তৈরির গবেষণা নিয়েও।
তবে এই প্রথমবার এত বড় পরীক্ষায় সাফল্য এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা মানুষের ভ্রূণ তৈরির কোষ কৃত্রিমভাবে বানিয়ে ফেলেছেন। নেচার সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন কৃত্রিম ‘এমব্রায়ো’ বা ভ্রূণ ‘ব্লাস্টয়েড’। এই ব্লাস্টয়েড থেকেই মানবশরীর, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হবে।
ব্যাপারটা খুলে বলা যাক। বিজ্ঞানীরা দুইভাবে এই পরীক্ষা করেছেন। প্রথমত, মানুষের ত্বকের কোষ নিয়ে তার মধ্যে জিনের গঠনবিন্যাস নতুন করে সাজিয়েছেন। মানে জেনেটিক্যালি রিপ্রোগ্রাম করে সেই কোষকে ভ্রূণের প্রাথমিক চেহারা দেওয়া হয়েছে। ভ্রূণ ঠিক যেমন আকৃতির, সেই গোলাকার রূপ দিয়েছেন গবেষকরা। আর এই কোষ দেখতে হয়েছে অবিকল মানুষের ভ্রূণের কোষ ব্লাস্টোসিস্টের মতো।
এখন প্রশ্ন হলো, ব্লাস্টোসিস্ট কী?
সহজ করে বলতে গেলে, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ভ্রূণ তৈরির আদিদশাকে বলে ব্লাস্টোসিস্ট। শুক্রাণু-ডিম্বাণুর মিলন হওয়ার ৫ দিন পরে যে কোষ প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়, তাকেই ব্লাস্টোসিস্ট বলে।
প্রথম পর্যায়ে ১৬টি কোষ নিয়ে গোলাকার বলের মতো গঠন তৈরি হয়। এর পরিধি হয় ০.১-০.২ মিলিমিটার। ধীরে ধীরে এই গোলাকার বলটা বড় হতে থাকে। ২০০ থেকে ৩০০ কোষ থাকে। এই কোষগুলোর আবার বিভাজন শুরু হয়। এরপর ব্লাস্টোসিস্ট জরায়ুর মধ্যে ইমপ্লান্ট হয় এবং ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণের চেহারা নিতে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা এই ব্লাস্টোসিস্টই তৈরি করে ফেলেছেন।
গবেষকরা বলছেন, কৃত্রিমভাবে তৈরি ব্লাস্টোসিস্টের মধ্যে এমন কোষও ঢোকানো হয়েছে, যা থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হতে পারে। শুক্রাণু-ডিম্বাণুর নিষেকে তৈরি সাড়ে ৩ দিন বয়সী একটি স্বাভাবিক ভ্রূণ থাকলে মাতৃজঠরে যা যা পরিবর্তন ঘটার কথা, এ ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই ঘটতে পারে।
অর্থাৎ এই পরীক্ষা যদি শেষ পর্যন্ত সফল হয়, তাহলে গবেষণাগারেই কৃত্রিমভাবে প্রথম মানবশিশু তৈরি করা সম্ভব হবে। তবে সেই পর্যন্ত গবেষণা এগোতে এখন অনেক সময় লাগবে। সূত্র: দ্য ওয়াল।