অর্থনীতি ডেস্ক:
চিকন ও মাঝারি মানের চালের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। মিল মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ধান মজুদ করে বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও চালের দাম হঠাৎ এমন বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে এখানকার ১৬ জেলায় প্রায় ২১ লাখ হেক্টর জমিতে ৫৫ লাখ টন আমন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ কৃষকই তাদের উৎপাদিত ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই উত্তরাঞ্চলের চাল ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা ও কৃষকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে সংকট যদি কিছু থেকেই থাকে, তা হলে সেসব ধান গেল কই? গত এক সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলের বাজারগুলোয় চিকন ও মাঝারি মানের চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
জানা গেছে, রংপুরের মাহিগঞ্জ, দিনাজপুরের পুলহাট, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এসব মোকামে এক সপ্তাহ থেকে অটো রাইসমিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে চিকন ও মাঝারি মানের চাল প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে এই চাল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম দামে পাওয়া যেত।
রংপুরের বেশ কজন আড়তদার জানান, তারা বিভিন্ন মোকাম ঘুরেও অটো রাইসমিলগুলোর কারণে চাল সংগ্রহ করতে পারেননি। মিল মালিকরা বাজার থেকে একতরফাভাবে ধান সংগ্রহ করে ইচ্ছামতো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃষকদের কাছেও ধান নেই।
রংপুর সদরের আমন চাষি অমল চন্দ্র, কাউনিয়ার আফজাল হোসেন, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের আব্দুর রহিমসহ অনেকে জানান, তারা আমন ধান গোলায় তোলার পর পরই কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের কাছে এখন কোনো ধান নেই। ফলে এখন ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়লেও তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না; বরং এতে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।
রংপুর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, অটো রাইসমিল মালিকরা আগে থেকে ধানের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অটো রাইসমিলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আহমেদ অবশ্য চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করেন।
তিনি বলেন, চিকন ও মাঝারি মানের চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু মোটা চালের দাম কমেছে। এ ছাড়া চাহিদা বাড়াও চিকন চালের দামবৃদ্ধির একটি কারণ। এতে অটো রাইসমিলগুলোর পাশাপাশি কৃষকদের কাছেও কিছু ধান থাকায় তারা দুটো পয়সা বেশি পাচ্ছেন। আর অটো রাইসমিলগুলোয় ধান মজুদ রাখার বিধান রয়েছে। তাই ব্যবসার স্বার্থে তারা মজুদ রেখে বেআইনি কিছু করছে না বলে তিনি মনে করেন।
বিষয়টি নিয়ে রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা রায়হানুল কবির বলেন, চিকন ও মাঝারি মানের যে চালের দাম বেড়েছে তা বোরো জাতের, আমন নয়। আমনের দাম স্বাভাবিকই আছে। তার পরও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা ধান মজুদ করেছেন কিনা বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।