ই’য়াবার নিরাপদ রুট উপকূলীয় নৌপথ

0

ফিচার ডেস্ক:

ই’য়াবার নতুন রুট এখন উপকূলীয় অঞ্চলের নৌপথ। টেকনাফ থেকে কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, পিরোজপুরের তেলিখালী হয়ে মোংলা পোর্টে যায় বড় বড় চালান। আবার কুয়াকাটা-পাথরঘাটা থেকে বরিশাল হয়ে ঢাকায় আসার আরেকটি রুট আছে।

এসব নৌপথের প্রতিটিতেই চালান খালাস করা হয়। পরে তা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জে যায় নৌপথে। একপর্যায়ে তা ঢাকা শহরের পাশাপাশি সব বিভাগীয় শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে সারা দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে যায়।

এদিকে কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ এক শ্রেণির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও মা’ কদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের। রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জড়িয়ে পড়েছেন এই কর্মকাণ্ডে। ব্যবসায়ীরা প্রতি মাসে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা তাদের উৎকোচ দিয়ে থাকেন। এই টাকায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার, বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছেন অনেকে। এই ভ’য়াবহ এই আগ্রাসনে সরকার যেমন উদ্বিগ্ন, চিন্তিত অভিভাবক মহলও।

বড় বড় চালানগুলো মূলত মিয়ানমার থেকে নাফ নদী হয়ে টেকনাফে প্রবেশ করে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সড়কপথে তত্পরতা বৃদ্ধি করায় ব্যবসায়ীরা বড় চালান পাচা’রের জন্য দেশের নৌপথকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে।

তেলিখালীর হরিণপালা ও সন্নিহিত এলাকায় মিয়ানমার থেকে মাছ ধরার ট্রলারযোগে এসব আনা হয়। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনবিশিষ্ট দ্রুতগামী ট্রলারে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, বদরমোকাম, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি সমুদ্র এলাকা থেকে মিয়ানমারের পাঁচারকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। যা হস্তান্তরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের চোরা কারবারিরা যুক্ত।

এসব এলাকা থেকে দ্রুতগামী ট্রলারে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা, আলীপুর, মহিপুর, গঙ্গামতি ইত্যাদি মত্স্যবন্দর ও পর্যটনকেন্দ্রকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কুয়াকাটা-সংলগ্ন ফাতরার চর, পাথরঘাটার লালদিয়ার চর, চরদোয়ানী, বাগেরহাটের রায়েন্দা, শরণখোলা এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালপথে ট্রলার তেলিখালীর উদ্দেশে আসে।

এসব ট্রলার ভান্ডারিয়ার তেলিখালীর হরিণপালা ইকোপার্ক, মঠবাড়িয়ার তুষখালী ও মাছুয়া বন্দর ইত্যাদি নদীতীরবর্তী স্থান ব্যবহার করে। বহনকারীরা হরিণপালা ইকোপার্ক ও সংলগ্ন ইফতি ব্রিকসের ইটখোলা ও ইটের ভাটায় ডাম্পিং ও মজুত করে। এখান থেকে সুযোগ বুঝে যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্টিমার, বাস ও অন্যান্য যানবাহনযোগে ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, যশোর, মোংলা ইত্যাদি স্থানে পাঠানো হয়।

কখনো কখনো চালান সুন্দরবন হয়ে ভাণ্ডারিয়ার তেলিখালী, মোংলা, খুলনা ইত্যাদি গন্তব্যে পাঠানো হয়। কখনো কখনো জেলেদের কাছে দেওয়া হয় চালান। এছাড়া মিয়ানমার থেকে কাঁচামাল এনে ঘরে বসানো ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয় কখনো কখনো।

এদিকে ই’য়াবার টাকায় ঐ অঞ্চলে একটি মসজিদও করা হয়েছে। এছাড়া একশ্রেণির স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এই টাকায় দলীয় পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা দিয়ে দলীয় পদ টিকিয়েও রেখেছেন তারা। ব্যবসার টাকার ভাগ ঢাকা পর্যন্ত আসে।

দুই জন ব্যবসায়ী জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্যদের টাকা না দিয়ে এই ব্যবসা করা সম্ভব নয়। মা’ কদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদেরও নিয়মিত উৎকোচ দিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অনেক সময় উদ্ধারকৃত চালান হয়ে যায় আটার গুঁড়ো!

যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মা’ কদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, কারবারিরা চলে হাজার মাইল গতিতে। আমরা চলি ১০ মাইল গতিতে। আমরা ১ হাজার মাইল এবং তারা ১০ মাইল গতিতে চললেই এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। এছাড়া এই ব্যবসায় জড়িতদের বিচার দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। তাদের দ্রুত পৃথক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

এমনও হয়, একজনকে ২৫ বার গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কিন্তু বারবারই সে আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যায়। আর নৌপথে মা’ কদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের কোনো যানবাহন নেই। স্থলপথে যে যানবাহন আছে, তা-ও সীমিত। অনেকটা ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের’ মতো কাজ করছে নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডু এ ব্যাপারে বলেন, পাথরঘাটা, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।

তিনি বলেন, নৌপথে আমাদের কোনো যানবাহন নেই। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় নৌপথে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এ অভিযান অ’ব্যাহত থাকবে। ইত্তেফাক।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!