এখনই সরকারকে যে বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠানমালা শেষে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা ছেড়ে চলে গেলেন গতকাল। তার সফরকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সুস্পষ্ট মেরুকরণ এবং বিভাজন রেখা দেখা দিয়েছে। আর শুধু তাই নয়, মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠান উদযাপন এবং নরেন্দ্র মোদির ঢাকা আগমনকে ঘিরে সরকারও একটা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। রাজনৈতিক এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর দিকে নজরদারি ছিল কম।

এখন ব্যস্ততা কমলেও সরকারের সামনে সুস্পষ্ট কতগুলো চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান হচ্ছে। অবিলম্বে সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সরকারকে কিছু বিষয়ের দিকে সুস্পষ্ট নজর দিতে হবে। যে বিষয়গুলোর দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে:

১। উ’গ্র মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবেলা করা: সরকারের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে এখন সামনে এসেছে উ’গ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী। হেফাজতে ইসলাম তাদের নেতৃত্ব আসার পর থেকে সরকারের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে, বিভিন্ন ঘটনায় সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। আহমদ শফীর মৃ’ত্যুর পর অনেকটা জবরদখল করে সংগঠনের আমির বনে যাওয়া জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজত এখন আওয়ামী বিরোধী শক্তি হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতা করেছে, ভাস্কর্য ভেঙেছে কয়েকটি জায়গায়। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরেরও বিরোধিতা করেছে। আর শুধু বিরোধিতাই নয়, একজন বিদেশী অতিথি ঢাকায় আসার পর তারা যে ধরনের আচরণ করেছে তা ধৃ’ষ্টতাপূর্ণ এবং সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রদ্রো’হিতা।

তাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, এই সিদ্ধান্তে আসা- সরকার কি আবার হেফাজতের সাথে আপোষ রফা করবে নাকি তাদের বিরু’দ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সরকার যদি হেফাজতের সাথে নতুন করে আপোষ রফা করে তাহলে সেটি হবে ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, হেফাজতের মত সাম্প্রদায়িক শক্তি কখনো বাংলাদেশ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি হতে পারে না। তাই সরকারকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

২। করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়া: গত ১০ দিনে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। আজ একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ মৃ’ত্যুবরণ করেছে। টানা ৪ দিন ধরে সাড়ে ৩ হাজারের উপর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে করোনা মোকাবেলার জন্য নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে। সরকার গত ১০ দিন একটা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। কাজেই এখন তারা কী ধরনের কর্মকৌশল গ্রহণ করবে সেটি দেখার বিষয়।

৩। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম দেয়া: সাম্প্রতিক সময়ে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি লক্ষণীয়। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলবে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তীতে এমনি মানুষ নানারকম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। সেখানে যদি রোজায় জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে যায়, তা সরকারের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

৪। বহুমুখী রাজনৈতিক চাপ: হেফাজতের আন্দোলন দেখে অনেক মহলই উৎসাহী হচ্ছে এবং তারা এই সুযোগে নতুন করে আন্দোলনের স্বপ্ন দেখছে। আর বিশেষ করে হেফাজতের এই আন্দোলন দেখে বিএনপি, বামমোর্চাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলনে উৎসাহ অনুভব করছে। আর এই প্রেক্ষাপটে সরকারের জন্য নতুন একটি বহুমুখী রাজনৈতিক চাপ দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকারকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

৫। সরকারের ভিতরে অপশক্তি: হেফাজতের আন্দোলনের সময় সরকারের ভিতরের একটি অপশক্তির অপচ্ছায়া সুস্পষ্ট হচ্ছে। যারা স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদীদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, যারা তাদের সঙ্গে এক ধরনের আপোষ রফা করতে চাইছে। আর এটি সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের ভিতরে যে মৌলবাদী অপশক্তি রয়েছে সেই মৌলবাদী অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে এখনই, এটি মনে করেন বিশ্লেষকরা।

আর এই সমস্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেই সরকারকে সামনের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করতে হবে। সরকারকে চাপে ফেলার যে কৌশল নেওয়া হয়েছে সেই কৌশল মোকাবেলা সরকার কিভাবে করবে সেটি দেখার বিষয়। বাংলাইনসাইডার।

শেয়ার করুন !
  • 102
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!