বিশেষ প্রতিবেদন:
স্বঘোষিত স্বাধীনতা বিরোধী, একাত্তরে পাকিস্থানের পক্ষে সরাসরি অংশ নেয়া খেলাফত মজলিশের নেতা শাইখুল হাদিস আজিজুল হকের পুত্র হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক কর্তৃক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের দাবি করা হলেও স্বাধীনতা দিবসের দিন বায়তুল মোকাররমে বাঁশ, পাইপ, রড ও ইট পাথর নিয়ে অবস্থান নেয়া হয়েছিল।
এই অ’রাজকতা সৃষ্টিকারী নেতাকর্মীদের অধিকাংশই জামায়াত শিবিরের সদস্য। শিবির নেতা সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ও সাবেক শিবির নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ গত ১৬ মার্চ থেকে সারাদেশের শিবির ক্যাডারদের ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে সমবেত করতে শুরু করেছিল। প্রশাসন সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ নিলে হয়তো সহিং’সতার মাত্রা কমানো যেত।
গত কয়েক দিনের সহিং’সতায় মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকার কথা অ’স্বীকার করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তাদের কেউ কেউ দাবি করেন, হেফাজতে ইসলামীতে অনু-প্রবেশকারী জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা মামুনুল হকের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে অ’রাজকতা সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে।
তবে একটি সূত্র বলছে, কৌশলে গা বাঁচানোর জন্য মামুনুল হক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বলেছিল। কিন্তু সহিং’সতা সৃষ্টির পরিকল্পনার সঙ্গে সেও জড়িত। আহমদ শফীর মৃ’ত্যুর পরপরই দেখা গেছে জামায়াত শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে ভিড়েছে বাবুনগরী এবং মামুনুল হকের সাথে। এর আগেও বেশ কয়েকবার বাবুনগরীর সাথে রাজাকার দেলওয়ার হোসেন সাইদী ওরফে দেইল্যা রাজাকার এর পুত্র মাসুদ সাইদীর গোপন বৈঠক হয়, যা পরবর্তীতে প্রকাশ পায়।
এ থেকেই হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামের মাঝে একটি গোপন সমঝোতার তথ্য বেরিয়ে আসে। যার ফলশ্রুতিতে হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিক্ষোভ এবং শফীর রহস্যজনক মৃ’ত্যু ঘটে। সাথে সাথেই ক্ষমতার দখল নেয় বাবুনগরী গং।
এদিকে ২৫ মার্চ রাতে ছাত্র অধিকার পরিষদের নুরু ২৬ মার্চের সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে লাইভে কোনো বিক্ষোভ না করার ঘোষণা দেন। কিন্তু তারেক রহমান, আতাউল্লাহ ও হাবিলদার রজব আলীসহ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের বেশিরভাগ নেতাকর্মী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে।
ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচারের পর আতাউল্লাহর নির্দেশে জামায়াত শিবিরের সমর্থকরা নুরুকে দালাল হিসেবে অভিহিত করে অ’কথ্য ভাষা প্রয়োগ করে। ২৬ মার্চ সকালে প্রচারিত লাইভ ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়।
সুশীল সমাজ অনেক সময়ই ক’টাক্ষ করে বলে থাকেন, সবকিছুতে কেন জামায়াত শিবির খোঁজা হয়। সবকিছুতে কলকাঠি নাড়ার নেপথ্যে যে জামাত শিবির আছে, তারা এটি যখন অনুধাবন করবেন তখন হয়তো দেরি হয়ে যাবে।
কোটা আন্দোলন শুরুর পর রাশেদ খান, ফারুক ও আতাউল্লাহসহ কয়েকজনের বিরু’দ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। তারা জামায়াতে ইসলামীর পেইড অনলাইন এক্টিভিস্ট ছিল এবং যু’দ্ধাপরাধীদের নিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ থেকে কোটা আন্দোলনের প্রাথমিক প্রচারণা চালানো হয়েছিল – এই মর্মে অনেক তথ্য প্রমাণ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো সক্রিয়ভাবে আমলে নেয়া হয়নি।
সারাদেশে ছাত্র, যুব ও গণ অধিকার পরিষদের নামে যেসব নেতাকর্মীদের যুক্ত করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই জামায়াত-শিবির, আনসারুল ইসলাম বা হিজবুত তাহরীরের সদস্য। যেমন, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য। তার ভাই শিবিরের শাখা সভাপতি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যুব অধিকার পরিষদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি রয়েছে যা শিবির কেন্দ্রিক। চিহ্নিত ক্যাডার ও না’শকতা মামলার আসামিদের নিয়ে বিজয় দিবস পালন করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘ’র্ষও হয়েছিল।
এবার ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিং’সতার নেতৃত্ব দিয়েছে পরিষদ নেতা আশরাফুল হাসান ও জুয়েল মিয়া। এছাড়া ঢাকায় ২৫ মার্চ পুলিশের ওপর হাম’লায় নেতৃত্ব দেয় সাবেক শিবির ক্যাডার জাহিদ হাসান, যে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আহমদ শফী বিরোধী আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছিল।
বর্তমানে যে অ’রাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা জামায়াত শিবিরের কয়েক বছরের পরিকল্পনার ফসল। এ সময়কালে তারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগেও পরিকল্পিতভাবে তাদের একনিষ্ঠ অনুগতদের অনু-প্রবেশ করিয়েছে।
গত কয়দিনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পদধারীদের মধ্যে যারা হেফাজতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে বা আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর হয়েছে, তা একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। আগামীতে এই অনু-প্রবেশকারীদের মাঠে নামানো হবে সর্বাত্মকভাবে।
অতএব, সরকার ও আওয়ামী লীগের অনুধাবন করা উচিত, অনেক দেরী হয়ে গেছে। এখনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে চরম মূল্য দিতে হবে।