কেন মাদ্রাসার দরিদ্র ছাত্ররা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়?

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলাম ও মৌলবাদীরা সহিং’সতা ঘটায়। চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ দেশের অনেক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘ’র্ষে জড়ায়।

এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং হাটহাজারি থানায় হাম’লা চালিয়েছে, জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে থানা, ভূমি অফিসের দলিলপত্র। শিল্প সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা, স্মারক এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও ম্যুরাল ধ্বং’স করে মৌলবাদীরা। এই ঘটনায় গত কয়েকদিন ধরে দেশে এক ধরনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছে কারা এসব ঘটাচ্ছে?

হেফাজতের ডাকা হরতার কারা বাস্তবায়ন করছে? কারা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিচ্ছে? থানা জ্বালিয়ে দিচ্ছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বেশকিছু কওমী মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এর ছাত্রদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাই মূলত সহিং’স কর্মকাণ্ড বাস্তাবয়ন করেছে। তাদের বোঝানো হয়েছে, এই হরতাল বাস্তবায়ন করা তাদের ঈমানী দায়িত্ব এবং তা পালন করতে গিয়ে যদি তাদের মৃ’ত্যু হয় তাহলে তারা ‘জান্নাতে যাবে’।

মোটকথা এসব কোমলমতি ছাত্রদের ব্রেনওয়াশ করে তাদেরকে দিয়ে সহিং’সতা ছড়ানো হচ্ছে, করা হচ্ছে বিপথগামী। যেহেতু এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের অধিকাংশ ছাত্রই এতিম, তাই এসব কাজে যেতে নিষে’ধ করার কেউ নেই। এ ছাড়া কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের পরিবারেরও মতাদর্শ এই ধরণের, তাই তাদের সন্তানরা হুজুরদের কথামত রাস্তায় নামছে, সহিং’সতা করছে।

পড়ুন: হেফাজতের মিছিলে না গেলে মাদ্রাসায় ১৫ দিনের খাবার বন্ধ (ভিডিও)

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ মানুষের দানের টাকায় এতিমদের থাকা-খাওয়া চলে। তাদের ভাষ্য, হুজুররা আমাদের বাপ-মা। তারা যা বলেন আমরা তাই করি;- এর বাইরে তেমন কোনো উত্তর তাদের কাছে নেই। অনেকেই জানেই না তারা কেন রাস্তায় নেমেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে, রেললাইন উপড়ে ফেলেছে, থানায় অগ্নিসংযোগ করেছে বা এর পেছনের রাজনীতি কী।

তারা শুধু জানে, হুজুর বলেছে রাস্তায় নেমে হরতার পালন করতে হবে, গাড়ি ভাঙতে হবে এটা তাদের ঈমানী দায়িত্ব। মজার ব্যাপার হলো, নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা শুধু নাম জানে কিন্তু তিনি কে বা কেন বাংলাদেশের তার সফরের বিরোধীতা করে রাস্তা বন্ধ করছে সেসবের কিছুই তারা জানে না।

এ ছাড়া কেউ যদি হরতাল করতে না যায় তাহলে হুজুররা তাদের প্র’হার করবে, খাবার বন্ধ করে দেবে, এই ভ’য়েও অনেকে রাস্তায় যাচ্ছে হরতাল করতে। যদিও সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যা’তন বা প্র’হার বন্ধ হলেও এই নিয়মের বালাই নেই মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদ্রসা শিক্ষা এমন একটা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসগুলোর অবস্থা ভ’য়াবহ। তাদের মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো চলে মানুষের দানের টাকায়। এসব ছাত্ররা এতিম তাই হুজুররা যা বলছে তাই তাদের কাছে ঈমানী দায়িত্ব মনে হচ্ছে।

কিন্তু তাদেরকে দিয়ে সহিং’সতা করানো কোনোভাবেই শিক্ষকদের কর্তব্য হতে পারে না। শিক্ষক হচ্ছে জাতির বিবেক আর তারা যদি ছাত্রদের সহিং’সতা শেখায় তাহলে সেই শিক্ষা জাতির জন্য বড় হুম’কি। এ ছাড়া সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল, হেফাজত এবং মৌলবাদীরা বুঝে ফেলেছে যে এতিমখানার ছাত্রদেরকে দিয়ে দেশে যে কোনো ধরনের সহিং’সতা করা সম্ভব।

আর এ কারণেই তারা এতো কঠোর বার্তা দিচ্ছে এবং সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন দুইটি কাজ সরকারের অবশ্যই করা দরকার। প্রথমত, মাদ্রসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা এবং সাধারণ শিক্ষা দেয়া। দ্বিতীয়ত, এখনই মৌলবাদীদের কঠোর হস্তে দমন করা। তা না হলে দেশের উ’গ্র মৌলবাদ ও ধর্মীয় রাজনীতি উত্থান হবে। যা বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত।

আর এর ফলে বাংলাদেশের যত অর্জন সব বিফলে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাইনসাইডার।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!