অনলাইন ডেস্ক:
পণ্য কিনলেই অর্থ ফেরতের নানান অ-স্বাভাবিক ‘ক্যাশব্যাক’ অফার, বাজার মূল্যের চাইতেও অনেক কম মূল্যে পণ্য কেনার সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরণের লোভনীয় অফার দিয়ে ব্যবসা করছে বাংলাদেশি ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি।
পণ্যের মূল্যের ওপর ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ এমনকি ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য কিনলে সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি অর্থ ফেরত দেওয়ার লোভনীয় এই অফারে হাজার হাজার গ্রাহক আকৃষ্ট হচ্ছেন। লাভবানও হচ্ছেন কেউ, বেশির ভাগই আছেন লাভবান হওয়ার অপেক্ষায়।
গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে সেই টাকায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ইভ্যালি ২০১৮ সাল থেকে। লোভনীয় এবং নিত্যনতুন চমক লাগানো অফারের জালে আটকা পড়ে যান গ্রাহকরা। এভাবে কৈ মাছের তেলে কৈ মাছ ভেজে পাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি জানার পরেও গ্রাহক খুশি।
পণ্য হাতে পেতে দীর্ঘদিন সময় লাগলেও এত কম মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ দেখে গ্রাহকরা ধৈর্য ধরতে শিখে গেছেন এই ক’বছরে।
তবে ধৈর্য হারিয়ে ফেলা গ্রাহকের সংখ্যাও কম নয়। তেমনই একজন গ্রাহক অগ্রিম পেমেন্ট করেছিলেন দুটো মোবাইল ফোনের জন্য। আর সেসব মোবাইল ডেলিভারি পেতে দেরি হচ্ছে দেখে তিনি হাজির হন ইভ্যালির ধানমন্ডি কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তাকে পড়তে হলো ব্যাপক হয়রা’নির মুখে। পণ্য বুঝে পেতে গ্রাহককে পুরো ভবনে ওপর-নিচ করতে হয় বেশ কয়েকবার।
দিনভর সেখানে দৌড়ঝাঁপের পরেও গ্রাহক বুঝে পাননি তার পণ্য। উল্টো ইভ্যালির কর্মী এবং সিকিউরিটি গার্ডদের হাতে হলেন লা’ঞ্ছিত এবং খেলেন মা’রধর।
এমনই অভিযোগ করে ফেসবুকে লিখেছেন হাশেম আহমেদ নামের এক গ্রাহক। তিনি পোকো এক্স৩ মোবাইল ফোন ইউজারদের একটি ফেসবুক গ্রুপে তার অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন।
হাশেম আহমেদ এর বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি দুটো মোবাইল ফোনের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখ সকালে পেমেন্ট করেন ইভ্যালিকে। কিন্তু এতদিন পরেও পণ্য বুঝে না পাওয়ায় দুপুরে সরাসরি চলে যান ইভ্যালি অফিসে। সেখানে কয়েক ঘণ্টা পুরো ভবনের ওপর-নিচ করতে হয়েছে তাকে এ বিষয়টি সমাধানের জন্য। এর কাছে, ওর কাছে গিয়েও তিনি পাননি কোনো সমাধান।
এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটে যায় অ-প্রীতিকর ঘটনা। ইভ্যালির ৩ কর্মী এবং ২ জন সিকিউরিটি গার্ডের হাতে ব্যাপকভাবে প্র’হৃত হন হাশেম আহমেদ। যার বিস্তারিত বর্ণনা তিনি তার লেখায় তুলে ধরেছেন।
হাশেম আ’ক্ষেপ নিয়ে বলেন, ইভ্যালি থেকে অনেক কিছু কিনেছি। উপকৃতও হয়েছি। তার মানে এই নয়, আপনাদের কর্মীরা এভাবে লা’ত্থি দিবে। আমরা ভিক্ষা করতে যাইনি। ন্যায্য দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম।
হাশেম আহমেদ জানান, আজকের পর থেকে তিনি আর ইভ্যালি থেকে কিছু কিনবেন না, তাদের অ্যাপ ব্যবহার করবেন না। দুটো মোবাইল ছাড়াও তার অর্ডারকৃত আরও কিছু পণ্য আছে, যা না পেলেও কিছু করার নাই। তিনি তার লেখার শেষে সৃষ্টিকর্তার কাছে এর বিচারও চেয়েছেন।
এদিকে এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা চোখে পড়ে ইভ্যালির কর্ণধার মোহাম্মদ রাসেল এর। তিনি তার ফেসবুক আইডি থেকে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। সেই সাথে বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিস্তারিত পদক্ষেপ নেবেন বলেও আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রিধারী মোহাম্মদ রাসেল এর কর্মজীবন শুরু ঢাকা ব্যাংক দিয়ে। সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ‘কিডস’ ব্র্যান্ডের ডায়াপার আমদানি শুরু করেন। পরে নিয়ে আসেন ইভ্যালি। শুরুর দিকে চালু করা হয় ‘ভাউচার’ নামক একটি পদ্ধতি, এতে দেওয়া হতো ৩০০ শতাংশ ও ২০০ শতাংশ ক্যাশব্যাক।
বিভিন্ন সময় ১৫০ শতাংশ, ১০০ শতাংশ এবং পরে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাকের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শুরুর দিকে ১০ টাকায় একটি পেনড্রাইভ এবং ১৬ টাকায় টি-শার্ট বিক্রি করে সাড়া জাগায় ইভ্যালি।
কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরু’দ্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে নানা অভিযোগও জমা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ের ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরাও মত দিয়েছেন, এতে মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ রয়েছে।