আইন আদালত ডেস্ক:
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলামের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতা চর্মনাই পীর ফয়জুল করিমের বিরু’দ্ধে প্রতিবেদন তৃতীয় তারিখেও দিতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
চার মাসে চার বার তারিখ পেছানোর পর আগামী ১৯ মে প্রতিবেদন চেয়ে নতুন তারিখ দিয়েছেন বিচারক।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম সত্যব্রত শিকদার এই আদেশ দেন।
ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে উত্তাল ছিল রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামে চর্মনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। পরে সক্রিয় হয় হেফাজতে ইসলাম।
এসব দল ও সংগঠনের নেতাদের নানা আক্র’মণাত্মক বক্তব্যের পর গত ৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। একইদিন মামুনুল হকের বিরু’দ্ধে আরও একটি মামলার আবেদন করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি আবদুল মালেক।
দুটো আবেদনেরই শুনানি হয় সত্যব্রত শিকদারের আদালতে। আর তিনি আবেদন গ্রহণ করে মামলা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
সেদিন ৭ জানুয়ারি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সেদিন পিবিআই ব্যর্থ হওয়ার পর প্রতিবেদন দেয়ার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় তারিখেও প্রতিবেদন দিতে না পারার পর নতুন তারিখ দেয়া হয় ৪ মার্চ। সেদিনও তদন্ত কর্মকর্তা সময় চাইলে নতুন তারিখ পড়ে ১ এপ্রিল।
মামলায় যা বলা হয়
গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর শাখার সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করেন মামুনুল হক।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গড়তে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে লা’শ পড়বে। আবার শাপলা চত্বর হবে।
একইদিনে চর্মনাই পীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠে ‘তৌহিদি জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরু’দ্ধে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জি’হাদ করব। রক্ত দিতে চাই না, দিলে বন্ধ হবে না। রাশিয়ার লেনিনের ৭২ ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে শেখ সাহেবের মূর্তি আজ হোক, কাল হোক তুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করব।
পরে ২৭ নভেম্বর হাটহাজারীতে এক ইসলামি জলসায় হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটবে এবং ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলা হবে।
আমিনুল ইসলাম বুলবুলের এজাহারে বলা হয়, আসামিদের এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। ধর্মের দোহাই দিয়ে আসামিরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছেন। তারা সাধারণ মুসলমানদের ক্ষেপিয়ে তুলে প্রকারান্তরে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে ঘৃ’ণা ও শ’ত্রুতার মনোভাব সৃষ্টি করছেন।
আসামিদের উসকানিমূলক বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধুদার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়।
মশিউর মালেকের মামলায় বলা হয়, মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুম’কি দিয়ে দেশ ও সরকারের স্থিতিশীলতাকে হুম’কির মুখে ফেলে দিয়েছে।