সময় এখন ডেস্ক:
সমাবেশে স্লোগানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগের নেতাকর্মী তো বটেই এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও কাফের বলে স্লোগান দেওয়া হয়। সেই সমাবেশে আবার হেফাজতে ইসলামকে শ’ত্রু মনে না করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনাইদ বাবুনগরী।
শ’ত্রুরা আশেপাশেই আছে বলে তাদেরকে চিনে নিতেও বঙ্গবন্ধু কন্যাকে উদ্দেশ করে বলেছেন তিনি।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে শুক্রবার জুমার নামাজের পর আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
গত রোববার হরতালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতের তা’ণ্ডবের দিন তাদের ওপর আক্র’মণের পাল্টা অভিযোগ এনে এই বিক্ষোভ করে সংগঠনটি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, আমরা আপনার শ’ত্রু নই। আপনার শ’ত্রু আপনার ঘাড়ে বসে আছেন। যারা কোনো ধর্ম মানে না, যারা নাস্তিক তারাই ইসলামের শ’ত্রু। তারাই আপনার শ’ত্রু।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হ’ত্যাকারী কেউ আলেম নয়। কোনো পীর আউলিয়া তাকে হ’ত্যা করেনি। তাঁকে হ’ত্যা করেছে তাঁর আশপাশে থাকা লোকজন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলব, আপনি আপনার শ’ত্রুকে চিনে নিন।
জেলে যেতে প্রস্তুত
গত শুক্রবার ও রোববারের তা’ণ্ডবের পর যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোকে মিথ্যা দাবি করে তিনি তাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিরপরাধ দাবি করেছেন। মামলা প্রত্যাহার না হলে আন্দোলনে নামার হুম’কিও দিয়েছেন। বলেছেন, জেলে যেতে হলেও তিনি পিছপা হবেন না।
ডাকবাংলো চত্বরের সামনে সমাবেশে বাবুনগরী বলেন, সরকার আমার নামে অনেক মামলা দিয়েছে। আরও মামলা দিতে পারে। আমি জেলে গিয়েছি। তাই আমি জেলখানায় যেতে ভয় পাই না। যে কোনো মুহূর্তে জেলখানায় যেতে আমি প্রস্তুত আছি।
গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনায় হেফাজত কর্মীদের বেপরোয়া হাম’লার পর পুলিশি অ্যাকশনে প্রাণ হারানোরা সংগঠনের কর্মী জানিয়ে বাবুনগরী বলেন, হেফাজতের যেসব নেতাকর্মী শহিদ হয়েছে, তাদের ক্ষ’তিপূরণ সরকারকে দিতে হবে। ছাত্রলীগ, পুলিশের হাম’লায় হেফাজতের যেসব নেতাকর্মী আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
হেফাজতের তা’ণ্ডবের পর যে মামলা করা হয়েছে, সেগুলোকে মিথ্যা উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব হেফাজত নেতা-কর্মী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। নয়তো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
নিরাপত্তা জোরদার
হেফাজতের এই বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
মহাসড়কের হাটহাজারী বাজার কাচারি রোডের মুখে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। ফলে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে থেকে হাটহাজারী মডেল থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, জুমার নামাজের পর হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে ডাকবাংলোতে হেফাজতের বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাই সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিত স্বাভাবিক হলে সড়ক যান চলাচল চালু করা হবে।
গত শুক্রবারও জুমার নামাজের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী মিছিল নিয়ে বের হয়।
এ সময় তারা হাটহাজারী থানা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ডাকবাংলোতে হাম’লা চালায়। পাশাপাশি তারা ভূমি অফিসে আগুনও দেয়। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ভূমি অফিসে প্রবেশে বাধা দেয় হেফাজতের কর্মীরা।
এ সময় হেফাজত ও পুলিশি অ্যাকশনে ৪ জন প্রাণ হারান। তাদের ডেডবডি পুলিশি পাহারায় নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছে দেয় পুলিশ।
পরদিন শনিবার সকালে হেফাজত কর্মীরা মাদ্রাসা গেটে অবস্থান নিয়ে দেয়াল তুলে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে রাখে। রাতে ডাকবাংলোতে ফের আগুন দেয় হেফাজতের কর্মীরা। পাশাপাশি তারা দুইটি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়।
৩ দিন পর তারা দেয়াল তুলে নিলে স্বাভাবিক হয় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে।
রোববার হরতালে হেফাজত কর্মীরা হাটহাজারীর পাশাপাশি ব্যাপক সহিং’সতা চালায় নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আক্র’মণ ছিল বে’পরোয়া। হাজার হাজার মাদ্রাসা ছাত্র সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় ভা’ঙচুর চালিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে। হাম’লা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন, স্থানীয় প্রেসক্লাবেও।
এসব ঘটনায় সব জেলায় বেশ কিছু মামলা হলেও তাতে হেফাজতের কাউকে আসামি না করা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। অবশ্য পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেছেন, তদন্তে যাদের নাম আসবে, তাদের সবাইকেই অভিযোগপত্রে আসামি করা হবে।
ভিডিও: