সময় এখন ডেস্ক:
হেফাজতের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থন করি না। তবে তাদের মিটিং মিছিল করাটাকে সমর্থন করি। এটা তাদের মৌলিক অধিকার। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় তৃতীয় রাষ্ট্র জড়িত বলে এক অদ্ভূত দাবি করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আজ সোমবার দুপুরে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেজর হায়দার মিলনায়তনে সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তা’ণ্ডবের ঘটনার সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য ঢাকা থেকে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট টিম গত ৩ এপ্রিল সেখানে সফর করে ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে জ’ঘন্য ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমার মতে মামুনুল হক একটা জ’ঘন্য ব্যক্তি, ‘নাস্তিকের কোনো বাঁচার অধিকার নেই’ উনি যেসব কথা বার্তা বলেন, এই দেশ কি উনি করেছেন? আমরা করেছি। এই দেশের জন্য আমার ভাই প্রাণ দিয়েছে, আপনার বোন প্রাণ দিয়েছেন, তাদের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ।
মামুনুল হকের দ্বারা বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়নি। মামুনুল হকরা এজেন্ট প্রভোকেটর। যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুড়ছে তখন উনি ফূর্তি করতে গেছেন রিসোর্টে। ওই নারী তার ন্যায্য স্ত্রী কি না প্রমাণ দিতে হবে। তাদের অনেকে নারী নির্যা’তনের সাথে জড়িত।
অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের মতাদর্শ, রাজনীতি, কিংবা কর্মকাণ্ড কোনটাকেই সমর্থন করেন না বলে সাফ জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমরা হেফাজতকে সমর্থন করি না, করবো না। তাদের সাথে আমাদের কোন সর্ম্পক নেই, কোনভাবেই না।
ধর্মের নামে হেফাজত নেতারা দেশে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছেন এমন অভিযোগ তুলে সংগঠনটির বিরু’দ্ধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নেয়ার দাবি জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় সরকার এখনও হেফাজতের বিষয়ে নমনীয়। আরও আগে হেফাজতের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলে তারা এতো বাড়তে পারতো না।
হেফাজতকে সঠিক মানবিক ইসলামের পথে আসার আহ্বান জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে শুধু লম্বা শার্ট পরলে ইসলাম হয় না। মনের দিক থেকে অন্তরের দিক থেকে রাসূলকে অনুসরণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সহিং’সতার ঘটনায় শুধু হেফাজতের লা’ঠিয়ালদের নয়, যারা নিশ্চুপ ছিলো বা দায়িত্বে অব’হেলা করেছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
হেফাজত নেতাকর্মীদের হাম’লায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষ’তিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সোমবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের হাম’লাকে একাত্তরে মার্চ মাসে পাকিস্থানি হা’নাদার বাহিনীর চালানো ব’র্বরতার সঙ্গে তুলনা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে আমরা যে দৃশ্য দেখেছি তার সাথে শুধু একাত্তরের তুলনা করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কর্মী রুমী আমাতুল্লাহ বলেন, হেফাজতসহ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরু’দ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে হেফাজত ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করলেও, পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থা কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাদের পুনরায় হাম’লার আভাস পায়নি? এমনকি হাম’লার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, সবখানে হেফাজতের তা’ণ্ডব। রেলস্টেশনে আগুন দেয়া থেকে ভূমি অফিস পোড়ানো পর্যন্ত। আমরা এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।
রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ুম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিং’সতার ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে হেফাজতের সহিং’সতার ঘটনায় হাজারো অ’জ্ঞাতনামা আসামি না করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন ও মামলা করার দাবি জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধ্বং’সযজ্ঞ চালায় হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা। পুরো জেলাশহর জুড়ে চালানো হাম’লায় শতাধিক সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা, বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়।
হেফাজত কর্মীদের সেই হাম’লা থেকে বাদ পড়েনি রেল স্টেশন, ভূমি অফিস, ট্রেন, পুলিশ লাইন, সদর থানা, হাইওয়ে থানা ও টোল প্লাজা। এমনকি হাম’লায় দেশের সংস্কৃতির অন্যতম তীর্থস্থান সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে ধ্বং’সস্তূপে পরিণত করে হেফাজত।
ভয়াবহ সেই হাম’লার ৭ দিনের মাথায় হেফাজত ইসলামের সেই তা’ণ্ডবের সমালোচনা করে সোমবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করেন ১৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নেতা ড. রেজা কিবরিয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপিকা দিলারা চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফত, রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম,
ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, নারীর জন্য সুশাসনের নির্বাহী পরিচালক রুবী আমানউল্লাহ, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক ও ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান প্রমুখ।