‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের পেছনে নয়, এই মেধাবীদের জন্য অর্থব্যয় করুন’

0

মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, মুখে ধর্মের নীতি নৈতিকতার বয়ান দেয়, সবাইকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে সবক দেয়, কিন্তু নিজের জীবনে লবডঙ্কা! যাবতীয় অপকর্ম, অ-ধর্ম আর ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ডের নামে সাধারণ মানুষের জান-মালের জন্য হুম’কি হিসেবে আবির্ভূত হয়- এমন ধর্ম ব্যবসায়ীদের সংখ্যা আমাদের চারপাশে হাজার হাজার।

প্রতিনিয়ত আমরা সেসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচিত হতে দেখছি। পরস্ত্রীকাতরতা, যৌ- অপরাধ, হ’ত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী এহেন কোনো অপরাধ নাই, যাতে তাদের সম্পৃক্ততা দেখা যায় না। সেই একাত্তরে আমরা দেখেছি ধর্মের নামে দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধীতাকারীদের নৃশং’সতা। তাদের উত্তরসুরীরা এখন বহুগুণে ফুলে ফেঁপে জাঁকিয়ে বসেছে।

লাখ লাখ টাকা দিয়ে তাদেরকের হেলিকপ্টারে চড়িয়ে আনা হয় ওয়াজ মাহফিলে, ঘড়ি দেখে সময় দেন, ধর্মীয় বক্তব্যের নামে রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে, ২৮ পদের খানা খেয়ে তারা হেলিকপ্টারে চড়ে বিদায় হন। সাধারণ মানুষের কাছে তারা যেন চলচ্চিত্র তারকা! আর তাদের ব্যক্তিগত জীবন যাপন বড়ই কল’ঙ্কময়।

সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থে আয়েশ করা এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ১ পয়সাও কর দেন না। তারা দেশের কোনো উন্নয়নের পেছনে বিন্দুমাত্র অবদানও রাখেন না। সত্যিকারের জনকল্যাণে তাদের দেখা পাওয়া যায় না। অথচ উগ্রবাদী মতবাদের চাষাবাদ করেন তারা।

তাই সময় এসেছে এদেরকে প্রতিহত করার। এদের পেছনে অর্থব্যয় না করে বরং দরিদ্র কিন্তু মেধাবী, অর্থাভাবে আটকে আছে যাদের পড়ালেখা, তাদের দিকে হাত বাড়ান। তাদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসুন, জাতির সত্যিকার ভবিষ্যৎ তারাই।

বিডিনিউজের বরাতে আজ একজনের কথা বলি।

লালমনিরহাটের মিজানুর রহমান এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থাভাব তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সংশয় নিয়ে এসেছে।

কুলাঘাট ইউনিয়নের ধরলা নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চলে চর কুলাঘাট গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে মিজানুর চিকিৎসক হয়ে তার বন্যাকবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষদের সেবার করার স্বপ্ন দেখেন।

২০১২ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মিজানুরের দিনমজুর বাবা মফিজ উদ্দিন ধরাধাম ত্যাগ করেন। ৬ সন্তানকে নিয়ে তার মা জোবেদা বেগম অকুল পাথারে পড়েন।

তবু হার মানেননি তিনি; ধার-দেনা, কষ্টার্জিত উপার্জন আর শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় ছেলের স্বপ্নকে এতদূর এগিয়ে এনেছেন তিনি। এখন অর্থাভাবে মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

জোবেদা বেগম বলেন, মাইনসের বাড়িত কাজ করে, ঘরোত থোয়া মুষ্টির চাউল বেচে, ধারদেনা করে খুব কষ্ট করে ছওয়াটাক এতদূর নিয়ে আছচুং বাহে, মোর কিচ্ছু নাই। ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

ভর্তি ফি, পড়ালেখার উপকরণ ও স্কেলিটন, পোশাক এবং আনুষাঙ্গিক খরচসহ প্রায় ১ লাখ টাকা দরকার মিজানুরের। মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা করে চিকিৎসক হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চান তিনি।

কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী বলেন, সবার সহযোগিতা ও নিজের চেষ্টায় মিজানুর এত দূর এগিয়েছে। মেডিকেলে পড়তে যে অর্থের প্রয়োজন তার যোগান দেওয়া তার ও পরিবারের পক্ষে খুবই কষ্টকর। এই ইউনিয়নে মিজানুরই প্রথম ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।

মিজানুর গোল্ডেন জিপিএ-ফাইভ পেয়ে চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে মিজানুর ছাড়া শুধু বড় ভাই মজিদুল এসএসসির গণ্ডি পেরিয়েছেন।

৯ম শ্রেণি থেকেই টিউশন করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে গেছেন মিজানুর। গ্রামে ৮ শতক জমির ওপর ছোট একটি বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই তাদের।

মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় মিজানুরের উত্তীর্ণ হওয়ার খবরে দারুন উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। তার বাড়িতে পাড়া-পড়শির ভিড় এখন। তার বাল্যবন্ধু সোলায়মান আলী বলেন, মিজান ৯ম শ্রেণি থেকে টিউশন করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতো। আমাদের প্রধান শিক্ষক তাকে সহায়তা করতেন।

প্রতিবেশি নাসিমা বেগম বলেন, ছোট থাকি মিজানুরকে দেখছি খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করে যাচ্ছে। পড়াশোনায় সে খুব ভাল। সরকারের কাছে হামরা মিজানুরের জন্য সহযোগিতা চাই। সে যেন পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হয়ে আসে।

এই যে কষ্ট করে পড়ালেখা করে আসা মিজানুররা একটা উপযুক্ত পর্যায়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছেন, তার মত হাজারো মিজানুর হতাশায় নিমজ্জিত, সারাদেশ ঘুরতে হবে না, আপনার আশপাশেই তাদের দেখা পাবেন। সামান্য কিছু আর্থিক সহায়তা বা সমর্থন পেলেই এদের কাছ থেকে জাতি পেতে পারে অনেক বড় প্রতিদান। অথচ এদের জন্য এগিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা অতি নগণ্য।

অন্যদিকে ঘড়ি দেখে মাত্র ১ ঘণ্টা মাহফিল করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা গুণে গুণে নিয়ে যায় লাখ লাখ টাকা। আয়োজনের পেছনে খরচ আও কয়েক লাখ। এই টাকা দিতে কার্পণ্য নাই কারো। বিনিময়ে কী পাচ্ছেন, সেটাও ভেবে দেখুন। বিবেককে প্রশ্ন করুন।

লেখক: ক্বারী ইকরামুল্লাহ মেহেদী
পরিচিতি: শিক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মী
পেকুয়া, কক্সবাজার

শেয়ার করুন !
  • 109
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!