বিএনপিতেও হাইব্রিড-কাউয়া নিয়ে তোলপাড়!

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

জাতীয় সংসদে বিএনপির আসন আঙ্গুলে গোনা যায়। সেই বিএনপি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত কোটায় নির্বাচিত এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে হুইপের দায়িত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছে। বিএনপিতে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথমত, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপিতে নবাগত এবং অনু-প্রবেশকারী হিসেবে শুরু থেকেই চিহ্নিত। দ্বিতীয়ত, তিনি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নন। তৃতীয়ত, তিনি এতটাই তরুণ ও নবীন রাজনীতিবিদ যে, হুইপ পদের জন্য তিনি যোগ্য নন বলে মনে করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। আর রুমিন ফারহানাকে ঘিরে বিএনপিতে হাইব্রিড, কাউয়া ও অনু-প্রবেশকারীদের বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, এখন উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতারাই বিএনপি দখল করছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে। যারা মাটি আঁকড়ে বিএনপিকে আগলে রেখেছে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বরং বাইরে থেকে আগত কিছু গ্যালারী শো করা আদর্শহীন ব্যক্তিদেরকে রাজনীতির সিংহাসনে বসানো হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে তাবিথ আউয়াল, রুমিন ফারহানার মত ব্যক্তিদেরকে গুরুত্ব বেড়েছে। আর এই গুরুত্ব বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে লন্ডন থেকে নির্দেশনা। তারেক যাদেরকে পছন্দ করেন বা তার সঙ্গে যাদের ভালো সমঝোতা, তারাই বিএনপির নেতৃত্বে আসছেন।

অথচ এই সময়ে বিএনপিতে যারা কষ্ট করছেন, আন্দোলন করছেন, জেল-নির্যা’তন সয়েছেন তাদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা। আগে এই বিষয়টি ছিল নীরবে নিভৃতে, তবে এখন বিষয়টি প্রকাশ হতে শুরু করেছে।

বিএনপির একজন প্রবীণ নেতা একটি সভায় বলেছেন, মহিলা আসনে কেন রুমিনকে দেওয়া হলো, তার অবদান কতটুকু। বরং রুমিনের চেয়েও বিএনপিতে অনেক ত্যাগী নারী নেতা আছেন, যারা জনপ্রিয় এবং দলের জন্য কাজ করছেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে রুমিনকে এমপি করার রহস্য কী- এই নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।

পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে তাবিথ আউয়ালকে নিয়েও বিএনপির মধ্যে এক ধরনের আলোচনা তৈরি হচ্ছে। তাবিথ আউয়ালকেও বিএনপিতে হাইব্রিড নেতা হিসেবে মনে করা হয়। তাবিথ আউয়ালের অতীত রাজনীতির কোনো ভূমিকা না থাকার পরও তাকে মেয়র পদে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব তাকে দেয়া হচ্ছে।

এভাবে বিএনপিতে যারা তারক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন, তারাই গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী বাগিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ এখন বিএনপিতে প্রকাশ্যেই উঠছে। বিশেষ করে বিএনপিতে যারা ত্যাগী, নিঃস্বার্থভাবে কঠিন সময়ে দলে কাজ করছেন তাদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলেও কথা উঠেছে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, বিএনপি এমন একটি দল যেখানে কোন সময়ে ত্যাগী পরীক্ষিত ব্যক্তিদেরকে মূল্যায়ন করা হয় না। এক-এগারোর সময় সবচেয়ে কঠিন অবদান রেখেছিলেন খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। কিন্তু তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবেই চির বিদায় নিতে হয়েছে। তাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হয়নি। অথচ সেই এক-এগারোর সময় যারা খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন, তাদেরকেই এখন ডেকে ডেকে নেতৃত্বে বসানো হচ্ছে।

বিএনপি কার্যালয়ের আবাসিক নেতা হিসেবে খ্যাত রুহুল কবীর রিজভী অসুস্থ হওয়ার পর বিএনপির দাফতরিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এমরান সালেহ প্রিন্সকে। তাকেও একজন অনু-প্রবেশকারী হাইব্রিড এবং মতলববাজ নেতা বলে মনে করেন বিএনপির অনেকেই। তারা বলছেন, এরা দুঃসময়ের ছিল না। এখন উড়ে এসে জুড়ে বসে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তারা নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে।

তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, আসলে যারা তৃণমূল থেকে উঠে আসছেন, যারা দলের জন্য অবদান রাখছেন তাদেরকে নজরে রাখা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু সংসদ কথা বলার জায়গা এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি দলকে সমালোচনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম, সেইজন্যই ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে এমপি করা হয়েছে।কারণ, তিনি একজন ভাল বক্তা।

তবে এই ব্যাখ্যা বিএনপির ত্যাগী নেতাদের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন, তাবিথ আউয়াল কেন বিএনপিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন, সেটাও প্রশ্ন। বাংলাইনসাইডার।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!