মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:
কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা বলি। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল তখন মতিউর রহমান নিজামী। ওই সময়ে বিভিন্ন জেলায় দলীয় নেতাদের কাছে পাঠানো নিজামীর স্বাক্ষরিত একটি সার্কুলার সৌভাগ্যবশত হাতে পেয়েছিলাম।
প্রায় অর্ধশত পৃষ্টার ওই সার্কুলালের মূল বক্তব্য ছিলো- গোলাম আযমের ছেলে প্রেম করে তার চাচীকে বিয়ে করেছে- এটা যেন দলীয় কর্মীরা জায়েজ মনে করে, না হলে ইসলামের ক্ষ’তি হয়ে যাবে। ইসলামের শ’ত্রুরা এটাকে হা’তিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। সত্য এবং অ’নৈসালিম হলেও দলীয় কর্মীরা যেন বিষয়টির স্বপক্ষে প্রচার করে এবং বলে শরীয়া মোতাবেক এটা জায়েজ আছে (নাউজুবিল্লাহ)।
বউ হারিয়ে গোলাম আযমের ওই ভাই জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়েছিলেন। লোকটি যাতে সংবাদ সম্মেলন করতে না পারেন সেজন্য ছাত্র শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার থেকে আসা কয়েকজন সাংবাদিক বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
ভদ্রলোককে সংবাদ সম্মেলনে কথাই বলতে দেননি। যা হোক বউয়ের দাবী না ছাড়ায় গোলাম আযমের ওই হতভাগ্য ভাইকে শেষ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা মগবাজারের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিলো। এরপর লোকটির আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আসলে ধর্মকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও ব্যবসার পুঁজি করলে যা হয়- জামায়াতও সেটা করেছে, মামুনুলরাও সেটা করছেন। এ দেশের কোটি কোটি মুসলমান এবং প্রকৃত আলেম সমাজ ধর্ম নিয়ে ব্যবসাও করেন না, ধর্ম নিয়ে রাজনীতিও করেন না। এটা করে গুটি কতক অ-মানুষ, জাগতিক মোহে যারা অন্ধ হয়ে, আখেরাত ভুলে গেছেন।
এই যে মামুনুল হকের কথা ধরুন। প্রমাণ হয়ে গেল শুধু মামুনুল এক নয়. তার গোটা পরিবার মিথ্যাবাদী। মিথ্যা- এক. মামুনুল বললো, এটা তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাম আমিনা তৈয়বা। এক মিনিট পরই সাথে থাকা নারী জানালেন তার নাম আমিনা তৈয়বা নয়, ঝর্না।
মিথ্যা- দুই. রিসোর্টের রেজিষ্টারে তার নাম না লিখিয়ে লেখালেন প্রথম স্ত্রীর নাম। মিথ্যা- তিন. প্রথম স্ত্রীকে ফোন করে বললো, সাথে থাকা নারী শহিদুল ভাইর স্ত্রী। মিথ্যা- চার. প্রথম স্ত্রীকে ফোনে বললো, তুমি ঘটনাটা জানো বলে সবাইকে বলবা। নিজে ক্রমাগত মিথ্যা বলে চলেছেন, সাথে স্ত্রীকেও মিথ্যা বলানোর জন্য অনুপ্রাণিত করছে। মিথ্যা- পাঁচ. এরপর মামুনুল হক বললো, এটা মানবিক বিয়ে, তিনি বিয়ে করেছেন, কিন্ত কাবিন নেই।
মিথ্যা- ছয়. মামুনুল হকের ভাগনে আওয়ামী লীগ সরকারের চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করে ফেসবুকে লিখল, মহিলা তার মামার বৈধ স্ত্রী। মিথ্যা- সাত. মামুনুলের ভাগনে সেই হেফাজতি যখন ফেসুবুকে বৈধ স্ত্রী বলে লিখলো তার মাত্র ১৫ মিনিট পর মামুনুলের বোনের সঙ্গে মামুনুলের প্রথম স্ত্রীর ফোনালাপে জানা গেলো মামুনুলের বোন, মামুনুলের স্ত্রীকে অনুরোধ করছে তুমি বলবা, আমার মা জীবিত থাকতে এ বিয়ে দিয়ে গেছেন।
প্রিয় পাঠক, দেখুন- গোটা পরিবারই মিথ্যাবাদী। একের পর পর এক মিথ্যা বলে চলেছে। এরপর তো কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে জাতিকে জানিয়ে দিলো মামুনুল কীভাবে তার সহজ সরল পিতার কাছ থেকে তার মাকে কৌশলে ছি’নিয়ে নিয়ে দিনের পর দিন র’ক্ষিতা হিসেবে ব্যবহার করেছে।
আসলে বাস্তব হলো, মামুনুল ওই মহিলাকে কখনোই বিয়ে করেনি।
ইসলামে বিয়ে নিয়ে কী বলা আছে, মামুনুল হক নিজেই তার এক ওয়াজে বলেছেন, গোপন বিয়ে বাতিল করতে বলা হয়েছে এবং গোপন বিয়ে কোন বিয়ে নয়। এ বিষয়ে মাওলানা আজহারী ওয়াজে বলেছেন, বিয়ে করতে হলে সামাজিকভাবে ঘোষণা করতে হবে। হয়রত ওমরের উদহারণ দিয়ে তিনি বলেছেন, হয়রত ওমর গোপন বিয়ে বাতিল করবেন বলে জানিয়েছিলেন।
গোপন বিয়ে যদি বাতিল হয়, তা হলে মামুনুলটা বৈধ হয় কীভাবে? অথচ বাবুনগরীসহ হেফাজতের একঝাঁক ডানাকাটা পরী বৈঠক করে ফতোয়া দিলো, মামুনুলের বিয়ে বৈধ। ঠিক কয়েক বছর আগে যেমনটা করেছিলো জামায়াত ইসলাম, গোলাম আযমের ছেলের ব্যাপারে।
কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। আরবি লেখা কাবার একটি গিলাফের ছবি আমার দেশ পত্রিকায় ছাপিয়েছিল পত্রিকার সম্পাদক জামায়াত গোষ্ঠীর একনিষ্ঠ সমর্থক মাহমুদুর রহমান। তাতে লেখা ছিলো ভিন্ন, কিন্ত তিনি ফটোশপ করে লিখেছেন- মক্কায় দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি দাবী করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে এরা দেশের কোটি কোটি সাধারণ মুসলমানদের ঈমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।
এসব ইউটিইউব মার্কা হুজুর ইসলামকে দুনিয়াতে উগ্রবাদী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। অথচ ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। সারা দেশে সব মিলে ৫০ জনের বেশী লোক হবে না, যারা টাকা নিয়ে ওয়াজ বিক্রি করে কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে বিপথগামী করছে। উগ্রবাদীতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই গুটিকত ওয়াজজীবির এত টাকা কোথা থেকে আসে?
মামুনল হক যে গাড়ীতে চড়েন, ওই গাড়ীটার দাম ৮ কোটি টাকা। এত টাকা কোথায় পায়? মামুনুল হকের ভগ্নিপতির দৃশ্যত কোন ব্যবসা নেই, অথচ রাজধানীর পল্টনে তার একের পর এক গগনচুম্বী অট্টলিকা। মামুনুলের বাবা ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী। একাত্তরে যে কজন ধর্ম ব্যবসায়ী আমাদের মা বোনদেরকে গণিমতের মাল বলে পাকিস্থানী সেনাদের হাতে তুলে দেওয়ার ফতোয়া দিয়েছিলেন, তার একজন মামুনুলের বাবা। ধর্ম ব্যবসা এদের কয়েক পুরুষের এবং সব আত্মীয় স্বজনের।
শুধু মামুনুল এক নয়- হেফজাতের নামে এখন যারা দলটিতে রয়েছে, এরা সবাই আসলে জামায়াতের লোক। শফি হুজুর জীবিত থাকাকালীন হেফাজতের কোনও রাজনৈতিক এজেন্ডা তেমন পাওয়া যায়নি, তার মৃ’ত্যুর পর এটার দখল নেয় জামায়াত। আমাদের দেশের কামেল আলম বলে খ্যাত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী তার জীবদ্দশায় একাধিকবার বাংলার মুসলমানদেরকে জামায়াতি ফেতনা থেকে দূরে থাকার অহব্বান জানিয়ে গেছেন।
উপমহাদেশের অনেক খ্যাতিমান আলেম বলেছেন, নাসারারাও যদি একটি দেশ দখল করে সেখানে একদিন ইসলামের পতাকা উড়তে পারে, কিন্ত জামায়াতিরা যদি কোন দেশের ক্ষমতায় আসে, কেয়ামত পর্যন্ত সে দেশে ইসলাম কায়েমের সম্ভবনা থাকবে না।
বুজুর্গদের কথা মিথ্যে হয় না- এই জামায়াতি রাজনীতির কারণে, ব্যবসার কারণে পবিত্র কোরান নিয়ে মিথ্যে বলে।
সে কারণে বলছিলাম- প্রিয় আলেম সমাজ আপনারা কেন মামুনুল হকদের মত দুরাচারদের দায় নেবেন। কেন বাবুনগরীর মত জামায়াতি এজেন্টদের দায় নেবেন। ওরা কোটি কোটি মুসলমানদেরকে নিজেদের স্বার্থে মিথ্যে বলছে। মিথ্যে শেখাচ্ছে।
ইসলামের রক্ষা করতেই আমাদের সবার বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ আলেম সমাজকে এখন মুখ খুলতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে। না হলে এরা ইসলামের আরো বড় ক্ষ’তি করে ফেলবে। ওরা এখনো সংখ্যায় অতি নগন্য। এ দেশের মানুষ কখনো ধর্মকে ব্যবসা মনে করে না। ধর্মকে পুঁজি করে ওরা কয়েকজন। ওরা নিজস্ব চ্যানেল খুলে সরকার, রাষ্ট্র ও সমাজের বিরু’দ্ধে ক্রমাগত মিথ্যেচার করে চলেছে। মামুনলের বিন্দুমাত্র সমালোচনা না করে সব ওয়াজজীবি ওই ঘটনার সমর্থন দিচ্ছে।
নিশ্চয়ই মহানবীর সেই গল্পটা অনেকের জানা আছে, একদিন কয়েকজন সাহাবীকে নিয়ে বসে কথা বলছেন মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ)। হঠাৎ সাহাবীরা দেখতে পেলেন, মহানবী কাঁদছেন, তার চোখে পানি। উদ্বিগ্ন সাহাবীগন জানতে চাইলেন ইয়া আল্লার নবী, আপনি কাঁদছেন কেন? মহানবী জবাব দিলেন, দেখুন সামনের ওই পাখিটা ময়লা খাচ্ছে, ওর গায়ে কালেমা ত্যাইয়েবা লেখা।
সাহাবীগণ জানতে চাইলেন, হুজুর এর মাজেজাটা কী? মহানবী বললেন, আখেরী জামানায় এমন কিছু লোক আসবে, যাদের লেবাস থাকবে ইসলামের কিন্ত চরিত্র হবে ময়লা খাওয়া পাখির মত। তাদের কারণে ইসলামের অনেক ক্ষ’তি হবে। সে জন্যই আমি কাঁদছি।
আজ মামুনুলদের কথা ধরুন, এর আগে মামুনুল মাদ্রাসার এক ছাত্রকে বলা- কার করে ধরা পড়ে। একাধিক নারীর সঙ্গে তার কথোপকথনের ফোনালাপ ফাঁ’স হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও কল দিয়ে নিজে এবং নারীদের ন’গ্ন করে কথা বলে।
মামুনুল একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। তার দল খেলাফতে মসজিলশ। তার দল খালেদা জিয়ার বিএনপির জোটের শরীক। আবার হেফাজতে ইসলামের সে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রকৃত আলেম নন, তিনি রাজনৈতিক নেতা। অথচ ব্যবহার করছেন পবিত্র ইসলামকে। প্রয়াত মাওলনা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলে গেছেন, নীল নদের পানিও নীল নয়, জামায়াতে ইসলামও ইসলাম নয়।
লেখক: লায়েকুজ্জামান