বিশেষ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের পরম মিত্র ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদের কথা বলে দেশব্যাপী তা’ণ্ডব চালিয়েছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
সংগঠনটি নিজেদের অরাজনৈতিক দাবী করলেও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে পরিষ্কার হয়েছে, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই ভারতবিরোধিতার জিগির তুলে দেশব্যাপী ধ্বং’সাত্মক কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। আর তাদের এই সহিং’স রাজনীতির পেছনে রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জামায়াতে ইসলামী।
হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী বলেছেন, আল্লামা শফীর মৃ’ত্যুর পর হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব পুরোপুরি জামায়াতের হাতের মুঠোয় চলে গেছে। জামায়াতের ইশারাতেই চলছে হেফাজত। বাইরে ইসলাম রক্ষার কথা বলে ভেতরে ভেতরে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছেন হেফাজতের বর্তমান নেতারা।
ছবি: রাজাকার দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র জামায়াত নেতা মাসুদ সাঈদীর সাথে গোপন বৈঠকে বাবুনগরী। যে ছবি পরবর্তীতে প্রকাশ হয়ে যায়।
আহমদ শফী যখন হেফাজতের আমির ছিলেন সংগঠনের সেই সময়কার যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় হেফাজতে ইসলামী জামায়াতবিরোধী ছিল। তাদের সাথে আমাদের আদর্শিক পার্থক্য রয়েছে। এ মতপার্থক্য কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শাহ আহমদ শফীও জীবদ্দশায় এই প্রশ্নে জামায়াতের সমালোচনা করেছেন।
মাওলানা রুহী বলেন, ২০১৩ সালে যখন শাপলা চত্বরে আমরা অবস্থান নেই, সে সময় জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা শফী সাহেবের নির্দেশের বাইরে গিয়ে সারা রাত শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন। যদিও শফী সাহেব রাতে অবস্থানের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু জামায়াত-বিএনপির পরামর্শে বাবুনগরী সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলে রাতে অবস্থান নেন।
বাবুনগরী নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন সে সময়। এ কারণে মামলাও হয় তার নামে। শফী হুজুরের মৃ’ত্যুর পর হেফাজত পুরোপুরিভাবে জামায়াতপন্থী বাবুনগরীর হাতে এখন।
হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মুহম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, জামায়াতবিরোধী অবস্থানের কারণে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী এবং আমাকে হেফাজত থেকে সরিয়ে দিয়েছেন বাবুনগরী। শফী সাহেব জীবিত থাকতে তারা জামায়াতের পক্ষে থাকলেও সংগঠনকে পুরোপুরি জামায়াতের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি।
এখন বাবুনগরী হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্বে জামায়াতপন্থীদের বসিয়েছেন। তাদের কমিটির ১৫৩ সদস্যের মধ্যে ৯১ জনই জামায়াত শিবিরের নেতা, বাকিরাও বিশ দলীয় জোটের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ইমান-আকিদার প্রশ্নে হেফাজত যে কর্মসূচি দেবে, জামায়াত তাতে সমর্থন করবে। অতীতেও করেছে। তাই আমরা হেফাজতের হরতালে সমর্থন দিয়েছিলেম।
আদর্শিক ও আকিদাগত বিরোধ থাকলেও অরাজনৈতিক সংগঠনের দাবিদার হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে সমর্থনকে রাজনীতির অংশ বলছে জামায়াতে ইসলামী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের চরিত্র শুরু থেকেই এমন। একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেও পরে খোলস পরিবর্তন করে কিছুদিন চুপচাপ ছিল দলটি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলকে সমর্থন দিলেও সময়মত তারা স্বরূপে ফিরে আসে।
হেফাজতের কর্মকাণ্ডে বোঝা যায় এসব জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত কর্মীদের কাজ। জামায়াতের আসল উদ্দেশ্য দেশকে পাকিস্থানী ধারায় ফেরানো।
যেহেতু তাদের অন্তরে রয়েছে একখণ্ড পাকিস্থান। তাই হেফাজতের কর্মীদের উচিৎ হবে, জামায়াতের হাত থেকে সংগঠনকে রক্ষা করা। নয়ত হেফাজতকে গিলে খাবে জামায়াত। নিউজব্যাংক।
947